ক্যাসিনো কারবারিদের সম্পদ জব্দ হচ্ছে

0
412

ক্যাসিনো কারবার, দলীয় পদ-পদবির বাণিজ্য, ঘুষসহ নানা দুর্নীতির মাধ্যমে যাঁরা কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন, তাঁদের সেসব সম্পদ জব্দ করার উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁদের অবৈধ আয়ে পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সম্পদও জব্দ করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সংস্থাটি। এরই মধ্যে ২০ জনের সব সম্পদ জব্দের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, যাঁদের বিরুদ্ধে ওই সব দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হয়েছে এবং অনুসন্ধান চলছে, তাঁদের ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সব সম্পত্তি জব্দ করার জন্যই আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলেই ক্যাসিনোর হোতাসহ দুর্নীতিবাজদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে।

দুদকের একটি সূত্র কালের কণ্ঠকে জানিয়েছে, এরই মধ্যে যাঁদের সম্পদ ক্রোক করার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিতর্কিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগ নেতা এনামুল হক আরমান, যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, ঢাকা উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব, মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি ও কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ, বিসিবির পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু ও তাঁর ভাই রূপন ভূঁইয়াসহ ২০ জন। একই সঙ্গে তাঁদের স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের নামে অবৈধ টাকায় কেনা সম্পদ ক্রোক করারও আবেদন করা হয়েছে।

এরই মধ্যে ২০ ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ জব্দ করার আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে যাঁদের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেছে, সেসব ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সব সম্পত্তি জব্দ করতে ইতিমধ্যে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। এখন আমরা আদালতের অনুমতির অপেক্ষায় আছি। অনুমতি পেলেই তাঁদের সব সম্পত্তি জব্দ করা হবে।’ তিনি জানান, এটি মামলার পর তদন্ত পর্যায়ে সম্পদ জব্দ করার আবেদন। দুদক এমনকি অনুসন্ধান পর্যায়ে কারো কারো সম্পদ জব্দ করার বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কেউ অবৈধ সম্পদ অর্জন করে ভোগ করতে পারবে না, দুদক কঠোর অবস্থান নিয়ে মাঠে কাজ করছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে ক্ষমতাসীন দলের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, সামশুল হক চৌধুরী, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উত্পল কুমার দে, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ও হাফিজুর রহমান মুন্সী এবং অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হাইসহ বেশ কয়েকজন প্রকৌশলীর বিষয়ে। তাঁদের সম্পদ জব্দ করার জন্য পর্যায়ক্রমে আদালতে আবেদন করা হবে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজের বিরুদ্ধে দুই কোটি ৬৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়ে মামলা করে দুদক। কেন্দ্রীয় যুবলীগের বহিষ্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সুমি রহমানের বিরুদ্ধে ১৪ কোটি ১১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। তাঁদের আরো ২০০ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য-উপাত্ত পেয়ে তা যাচাই-বাছাই করছেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা। দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসা অবৈধ অর্থে আনিসুর রহমানের ঢাকার শান্তিনগরে ইস্টার্ন হাউজিংয়ে ১২টি ফ্ল্যাট, জিগাতলায় একটি ফ্ল্যাট, গোপালগঞ্জে হাঁস-মুরগির খামার, হ্যাচারিসহ শত বিঘা জমি, ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে আরো স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি—সবই জব্দের আবেদন করা হয়েছে।

নিজেকে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা দাবি করা ঠিকাদার জি কে শামীম ও তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি আট লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানে তাঁদের এই বিপুল সম্পদের বৈধ উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি আরো কয়েক শ কোটি টাকার মালিক জি কে শামীম। ওই সব সম্পদই ক্রোক করার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। একইভাবে যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদের বিরুদ্ধে মামলায় পাঁচ কোটি ৫৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক। তাঁর এই অবৈধ সম্পত্তি জব্দের আবেদন করা হয়েছে। আর বিসিবির পরিচালক লোকমান হোসেনের বিরুদ্ধে চার কোটি ৩৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে ১২ কোটি ২৭ লাখ টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক।

দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি অনুসন্ধানদল ক্যাসিনো কারবারে জড়িতদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে। দলের সদস্যরা গণমাধ্যমে আসা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নাম যাচাই-বাছাই করে একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরির কাজ করছেন।  দুদকের গোয়েন্দা শাখার পক্ষ থেকে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। পাশাপাশি র‌্যাব ও বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানরা দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে বিপুল পরিমাণ গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেন। সেসব তথ্য ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেই অনুসন্ধান এবং তদন্ত করছে দুদক। এরই মধ্যে ৪০০ ব্যক্তির তথ্য-উপাত্ত চেয়ে আবেদন করা হয়েছে সরকারের বেশ কয়েকটি দপ্তরে। ক্ষমতাসীন দলের এমপি, রাজনৈতিক নেতা, ঠিকাদার, আমলাসহ অনেকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইমিগ্রেশন বিভাগেও চিঠি পাঠিয়েছে দুদক, যাতে অনুসন্ধান পর্যায়ে কেউ দেশ থেকে পালিয়ে যেতে না পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here