চলন বিলে ফিরছে পরিযায়ী পাখি, অভয়াশ্রমের দাবি

0
333

বিস্তৃর্ণ চলন বিল। দিগন্তজুড়ে এখন সবুজের সমারোহ। ক্যানভাসে ফুটে উঠছে বোরো রোপণ আর খাল-বিল শুকিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য। অথচ এককালে এই চলনবিল ছিল মাছ আর পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়। অতিথি পাখির সাথে দেশীয় পাখি আর শত প্রজাতির জলজপ্রাণীর ছিল পাশাপাশি অবস্থান। সে চিত্র এখন ঠাঁই করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়।

ঐতিহাসিক তথ্য ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলমান জলরাশির কারণে এ বিলের নাম হয় চলন বিল। ব্রিটিশ শাসনামলে ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ ও ঈশ্বরদী-চিলাহাটি রেলপথ নির্মাণের ফলে প্রথম চলন বিল খণ্ডিত হয়ে পড়ে। এরপর মহাসড়ক, সড়ক ও বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের ফলে একে একে বিলটি আরো সংকুচিত হয়ে পড়ে।

আশির দশকে এ চিত্র আরো ব্যাপকভাবে পাল্টে যেতে থাকে। বোরো আবাদের বিস্তার আর শ্যালো ইঞ্জিনের ব্যাপক প্রসারের ফলে খাল-বিল সেচে শুকিয়ে নির্বিচারে চলতে থাকে মাছধরা। এ প্রেক্ষাপটে জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়ে যায়। পাখিরা হারায় তাদের নিরাপদ আশ্রয়। বিপন্ন হয়ে পড়ে শত প্রজাতির পাখির জীবনচক্র। কমতে থাকে অতিথি পাখিদের আনাগোনা।

কিন্তু হঠাৎ করেই এ বছরে এ চিত্র পাল্টে যেতে থাকে। চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার নিমগাছির জয়সাগর ও নয়াপুকুর, তাড়াশ উপজেলার নওগাঁয়ে অবস্থিত মরা করতোয়া ও মথুরাদিঘীতে ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে অতিথি পাখিসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মরা করতোয়া নদীর ওই জলাশয়ে বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক হাজার পাখি ভেসে বেড়াচ্ছে। এদের মধ্যে রয়েছে বালিহাঁস, খয়রা, চকাচকি, বুনোহাঁস, কাদাখোঁচা ও সরালি ইত্যাদি। তাদের কলকাললিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে নওগাঁ হাট এলাকা। দলে-দলে পাখিরা পানিতে সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছে। গাছের ডালে বসে আছে ছোট পানকৌড়ি, বড় পানকৌড়ি, সাদা বক, ধূসর বক ও মাছরাঙ্গা। সব মিলিয়ে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।

নওগাঁ গ্রামের বাসিন্দা মো: জরিফুল ইসলাম জরিফ বলেন, এ বছর ঝাঁকে-ঝাঁকে অতিথি পাখি চলনবিলের বিভিন্ন এলাকায় এসে আশ্রয়ের অভাবে জড়ো হতে থাকে করতোয়া নদীতে। অঞ্চলটি গাছগালিতে পরিপূর্ণ ও বিস্তীর্ণ জলাশয় থাকায় পাখিরা নিরাপদ আশ্রয় মনে করছে। এছাড়া স্বানীয়রাও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সব ধরণের শিকারির প্রবেশ বন্ধসহ পাখিদের বিরক্ত না করার।

জীববৈচিত্র নিয়ে কাজ করা সিরাজগঞ্জের দ্যা বার্ড সেফটি হাউজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মামুন বিশ্বাস নয়াদিগন্তকে বলেন, এই মুহূর্তে জরুরি কাজ হচ্ছে পাখিদের কোন প্রকার বিরক্ত না করা। এ ছাড়াও ওই এলাকায় জনসচেতনতা বাড়াতে বিলবোর্ড, লিফলেট বিতরণ করা দরকার। আমরা ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে কাজ শুরু করতে যাচ্ছি।

এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আহম্মদ নিয়ামুর রহমান বলেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণের স্বার্থে স্থানীয়দের পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবেও চলনবিল এলাকার পাখি রক্ষায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।


LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here