লুৎফর রহমান- তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা:সিরাজগঞ্জের তাড়াশ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: বাবুল শেখের বিরুদ্ধে ভিজিডি’র চাল আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তিনি তিন জন কার্ডধারী দু:স্থ মহিলা কে আট মাস যাবত চাল না দিয়ে আত্মসাত করেছেন মর্মে, প্রতিকার চেয়ে মীর শহীদুল ইসলাম শহীদ নামের জনৈক ব্যক্তি গত ৩ অক্টোবর জনস্বার্থে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
বিষয়টি তদন্ত করে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে প্রকাশ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রালয়ের দু:স্থ মহিলা উন্নয়ন (ভালনারেবল গ্রæপ ডেভেলপমেন্ট-ভিজিডি) কর্মসূচির ‘ভিজিডি চক্র ২০১৯-২০২০’ গত ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়। উক্ত কর্মসূচির আওতায় তাড়াশ সদর ইউনিয়নে ১৬০ জন দু:স্থ মহিলার নামে ভিজিডি’র কার্ড বরাদ্ধ হয়।
এসব কার্ডধারীদের চাল বিগত আট মাস উত্তোলন করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে তাড়াশ উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মো: মীর শহীদুল ইসলাম শহীদ ¯^ প্রণোদিত হয়ে তাড়াশ সদর ইউনিয়নের ভিজিডি কার্ডধারীদের তালিকা উত্তোলন করেন।
সেখানে দেখা যায়, উক্ত ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বিদি মাগুড়া গ্রামের বাসিন্দা মোছা: নাসিমা খাতুনের নামে ভিজিডি কার্ড রয়েছে। কিন্তু তিনি জানেনই না তার নাম ভিজিডি’র তালিকায় রয়েছে। এমন কি তিনি কখনো কোন প্রকার চালও উত্তোলন করেননি।
একই চিত্র ওই গ্রামের মোছা: জহুরা খাতুনের। তার নামও তালিকায় থাকলেও তিনিও কোন প্রকার চাল উত্তোলন করেননি।
অপরদিকে চার নং ওয়ার্ডের চকজয়কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা মোছা: আমিনা খাতুনের নাম তালিকায় ৮৯৮৪২৭ নম্বরের কার্ডে থাকলেও তার চিত্রও একই রকম।
অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যান মো: বাবুল শেখ উল্লেখিত কার্ড সহ বেশ কিছু ভিজিডি কার্ড নিজ হেফাজতে রেখে আত্মসাত করেছেন।
এ প্রসঙ্গে ভূক্তভোগী মোছা: নাসিমা খাতুন, জহুরা খাতুন ও আমিনা খাতুনের সাথে সরেজমিনে গিয়ে কথা বলেন টেলিভিশন ও পত্রিকার স্থানীয় সংবাদ কর্মীরা।
ভূক্তভোগী ওই তিন দু:স্থ মহিলা জানান, তারা ভিজিডি কার্ডের জন্য চেয়ারম্যান মো: বাবুল শেখের কাছে ভোটার আইডি ও ছবি জমা দিয়ে ছিলেন। চেয়ারম্যান তাদের জানান,এ বছর তোমাদের তালিকা হয়নি। সামনের তালিকায় চেষ্টা করবো। অথচ তাদের নামের বরাদ্ধকৃত চাল কারা উত্তোলন করলো তা তাদের জানা নেই। এ ঘটনায় তারা বিচার দাবি করেন।
পরবর্তীতে সাংবাদিকরা একটি বিশ্বস্ত সূত্রে খোঁজ পান ওই কার্ড গুলো বোয়ালিয়া গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিন জনের কাছে চেয়ারম্যান বাবুল শেখ চার হাজার করে মোট ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এ সময় সাংবাদিকরা ওই তিন ব্যক্তির সাথে কথা বলে তিনটি কার্ডের ছবি তোলেন।
তাতে দেখা যায়, উপজেলা ভিজিডি কমিটির সরবরাহকৃত মূল তালিকায় ৮৯৮৪২৭ নম্বরের কার্ড টিতে রয়েছে মোছা: আমিনা খাতুন,স্বামীর নাম: মো: রবিউল করিম, মাতার নাম :আনোয়ারা খাতুন, গ্রাম : চকজয়কৃষ্ণপুর।
কিন্তু বাস্তবে কার্ডটিতে ওভার রাইর্টিং করে লেখা হয়েছে মোছা:আলিয়া খাতুন,স্বামী: আক্তার হোসেন, মাতা: আনোয়ারা খাতুন, গ্রাম: মথুরাপুর।
এ ছাড়াও তিন টি কার্ড থেকেই ছবি তুলে ফেলা হয়েছে। মূল কার্ডে উল্লেখিত তিন জন দু:স্থ মহিলা কোন স্বাক্ষর ও করেননি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে তাড়াশ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো:বাবুল শেখের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মীর শহীদুল ইসলাম শহীদ আমার রাজনৈতিক প্রতিদ্ব›দ্বী। প্রতিহিংসায় তিনি এটা করেছেন। এটা শুধু আমার ইউনিয়নেই নয় তাড়াশের সকল ইউনিয়নেই এমন সমস্যা রয়েছে। তবে যারাই করুক আমিও এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।
তাড়াশ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছা: মাহফুজা খাতুন বলেন, এ ধরনের বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ওবায়দুল্লাহ বলেন,আমি কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।