পাবনার গরু ব্যবসায়ী ও খামারীদের প্রায় সাত কোটি টাকা লোকসান

0
444

শফিউল আযম:পাবনা অঞ্চলের গো-খামারী ও মওসুমি ব্যবসায়ীদের এবারের কোরবানির ঈদে প্রায় সাত কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। পশুরহাটগুলোতে চাহিদার তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় তারা লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করেছেন। তবে মওসুমি ব্যবসায়ীরা এবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এছাড়া ক্রস হাইব্রিড ও দেশি জাতের অবিক্রিত প্রায় ১২ হাজার গরু নিয়ে গো-খামারি ও মওসুমি ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। অনেক ব্যবসায়ী খামারী ও চাষিদের পাওনা টাকা পরিশোধ না করতে পেরে চরম বিপাকে পড়েছেন বলে জানা গেছে।

পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর, আটঘড়িয়া, ঈশ্বরদী, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর উপজেলার খামারি ও চাষিরা ক্রস জাতের পাবনা ব্রিড, অষ্ট্রেলিয়ান-ফ্রিজিয়ান ব্রিড, ইন্ডিয়ান হরিয়ান ব্রিড, পাকিস্তানি সাহিয়াল ব্রিড ও দেশি জাতের গরু পালন করেন। সারা দেশে এ অঞ্চরের গরুর খ্যাতি ও চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এবার দেশের কোরবানীর পশুরহাটগুলোতে ক্রস হাই ব্রিড ও দেশি জাতের গরু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি থাকায় গরুর দরপতনে এ অঞ্চলের প্রায় পাঁচ সহ¯্রাধিক মওসুমি গরু ব্যবসায়ী ও খামারি মূলধন হারিয়ে পথে বসেছেন। তবে মওসুমি গরু ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি লোকসান হয়েছে।

গবাদিপশু সমৃদ্ধ পাবনা অঞ্চলের খামারি ও চাষিরা জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৭৫ হাজার কোরবানির পশু দেশের বিভিন্ন হাটে সরবরাহ করেছিলেন। গরু ব্যবসায়ীরা খামারি ও চাষিদের বাড়ী থেকে নগদ-বাঁকীতে গরু কিনে বিক্রির জন্য সড়ক ও নৌপথে ঢাকা, সিলেট, চিটাগাংসহ বিভিন্ন জেলার পশুরহাটে নিয়ে যায়। চাহিদার তুলনায় গরুর সরবরাহ বেশি থাকায় ঈদের দুই দিন আগে গরুর দাম কমে যায়। এতে অনেক ব্যবসায়ী ও খামারি বাধ্য হয়ে লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করেছেন, আবার অনেকেই গরু বিক্রি করতে না পেরে ফেরত নিয়ে এসেছেন।

বেড়ার প্রতিষ্ঠিত গরু ব্যবসায়ী আলতাব হোসেন জানান, দেশের টাংগাইল, ঢাকা, কুমিল্লা, চিটাগাং, সিলেটসহ দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় ছোট-বড় অনেক গরুর খামার গড়ে উঠেছে। কোরবানির ঈদে খামারগুলো থেকে গরু সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে দেশেই চাহিদার তুলনায় বেশি গরু উৎপাদন হয়। স্থানীয় পশুরহাটগুলোতে দরপতনে কম দামে গরু বিক্রি হয়েছে। এছাড়া বণ্যার কারণে এবার গরু বেচাকেনা কম হয়েছে। ঈদের দুই দিন আগে হঠাৎ গরুর দাম কমে যাওয়ায় এক লাখ টাকা দামের গরু ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। প্রত্যেক ব্যবসায়ীরই কম বেশি লোকসান হয়েছে।

একাধিক গরু ব্যবসায়ী ও খামারির সাথে কথা বলে জানা যায়, হাটে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি হওয়ায় ঈদের দুই দিন আগে গরুর দাম ব্যাপকভাবে কমে যায়। ট্রাক ও নৌকার ভাড়াসহ পথ খরচ উঠানোর জন্য ব্যবসায়ী ও খামারিরা লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করেছেন। বেড়ার নতুনপাড়া গ্রামের হায়দার আলী ঢাকার গাবতলী পশুরহাটে ৬০টি গরু তুলেছিলেন। এরমধ্যে ৪০টি গরু ১৫ লাখ টাকা লোকসান দিয়ে বিক্রি করেছেন। অবিক্রিত অবশিষ্ট ২০টি গরু ফেরত নিয়ে এসেছেন। একই গ্রামের মন্টু ব্যাপারির ৪৩টি গরুর ২১টি বিক্রি হয়েছে, ২২টি ফেরত নিয়ে এসেছেন। তার লোকসান হয়েছে প্রায় ৭ লাখ টাকা। নদী পাড়ের সোলেমান ব্যাপারির ২৫০টি গরুর মধ্যে ১১০টি বিক্রি হয়েছে। অবিক্রিত ১৪০টি গরু ফেরত নিয়ে এসেছেন। তার লোকসান হয়েছে প্রায় ২৫ থেকে ২৭ লাখ টাকা। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মওসুমি ব্যবসায়ীরা।

বেড়ার রাকশা গ্রামের কালা ব্যবসায়ী ৮টি গরু বিক্রি করে এক লাখ টাকা, হাতিগাড়া গ্রামের আকরাম ও আলতাফ ব্যবসায়ী লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করেছেন। সাঁথিয়া উপজেলার সেলন্দা গ্রামের খামারি রজব আলী হাইব্রিড জাতের ২০টি গরু চট্রগ্রাম হালিশহর হাটে নিয়েছিলেন। তার ৮টি গরু বিক্রি হয়েছে। অবিক্রিত ১২টি অনেক কষ্ট করে ফেরত নিয়ে এসেছেন। তার লোকসান হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। পাবনা জেলার দুই সহ¯্রাধিক গরু ব্যবসায়ী ও খামারি প্রত্যেকের ৫০ হাজার থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত লোকসান হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

এদিকে অনেক খামারি বাঁকী টাকা না পাওয়ার আশঙ্কায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গরু ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেক ব্যবসায়ী খামারী ও চাষিদের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে তাদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here