শফিউল আযম, বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা ঃ
পাবনার ফরিদপুর উপজেলার ডেমরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মাহ্ফুজুর রহমানের ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতা, অনৈতিক কর্মকান্ডসহ নানা অনিয়ম ও দূনীতির তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আট জন মেম্বর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পাবনা জেলা প্রশাসক, পাবনা দূনীতি দমন কমিশন এবং ফরিদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ পত্র দায়ের করেছেন। এদিকে চেয়ারম্যান অভিযোগ ধামাচাপা দেয়ার জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জোড় তদবির শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
অভিযোগকারীরা হলেন, সংরক্ষিত আসনের মেম্বর মোছাঃ ফরিদা খাতুন, মোছাঃ নূরজাহান খাতুন, মোছাঃ রাজিয়া খাতুন সাধারন ওয়ার্ড মেম্বর মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, মোঃ আনোয়ার হোসেন, মোঃ আব্দুল আলিম, তানভির হিরন ও মৃত. হাতেম আলী মেম্বরের পক্ষে তার স্ত্রী মরিয়ম খাতুন। তারা জানান, দীর্ঘ ৫৬ দিনে অভিযোগের প্রতিকার পাওয়াতো দুরের কথা, আজ পর্যন্ত কোন তদন্ত হয়নি। শুধু তাই নয়, কিছু কর্মকর্তা চেয়ারম্যানের পক্ষ নিয়ে অভিযোগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন।
ডেমরা ইউপি মেম্বরদের অভিযোগে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদে নিয়মিত মাসিক মিটিং করা হয় না। চেয়ারম্যান নিজেই মেম্বরদের স্বাক্ষর জাল করে মিটিং দেখান। মেম্বরদের সাথে আলোচনা না করে দালালের মাধ্যমে কার্ড প্রতি পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে ভিজিডি’র কার্ড বিতরণ করছেন। মেম্বররা এতে আপত্তি করলে অকথ্য ভাষায় তাদের গালিগালাজ করে বলা হয়, কার্ড প্রতি পাঁচ হাজার টাকা দিলে তাদের ৫-১০টি কার্ড দেয়া হবে। মেম্বরদের নামে প্রকল্প দিয়ে পিআইসিকে ডেকে নিয়ে জোড়পূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে বিলের টাকা তুলে আত্মসাত করা হয়েছে।
প্রকল্প দেয়ার কথা বলে মেম্বরদের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নিয়ে প্রকল্প দেয়া হয় নাই। সরকারি বিধিমালা অনুয়ায়ী “জায়গা আছে ঘর নাই” এমন হতদরিদ্র মানুষদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০ হাজার করে টাকা উৎকোচ নিয়ে তাদের ঘর দেয়া হয়নি বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। চেয়ারম্যান মাহ্ফুজুর রহমান ব্যক্তিগত লোক দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পরিচয় পত্র, ওয়ারিশান সার্টিফিকেটসহ অন্যান্য প্রতয়ন পত্র বাবদ ৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন। পরিষদের রাজস্ব কর আদায় করে করের টাকা কোন খাতে ব্যয় করেন তা মেম্বররা জানেন না।
চেয়ারম্যান মাহ্ফুজুর রহমান ইউনিয়ন পরিষদে কোন মিটিং না করে নিজেই টাকার বিনিময়ে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতা ও স্বামী পরিত্যাক্ত ভাতার কার্ড বিতরন করে আসছেন। সংরক্ষিত মহিলা মেম্বরদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকার ভাতার কার্ড দেয়ার কথা বলে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নিয়ে তাদের কোন কার্ড দেয়া হয়নি বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া চেয়ারম্যানের ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতা প্রতিবাদ করায় ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত মেম্বরদের সামনে এক মহিলা মেম্বরকে লাঞ্চিত করা হয়। এ ঘটনায় ওই মহিলা মেম্বর ফরিদপুর থানায় একটি জিডি করেছেন।
ডেমরা ইউনিয়ন পরিষদের আট নং ওয়ার্ডের মরহুম হাতেম আলী মেম্বরের স্ত্রী মরিয়ম খাতুনের সাথে গত শুক্রবার রাতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, চেয়ারম্যান মাহ্ফুজুর রহমান প্রকল্প দেয়ার কথা বলে তার স্বামী কাছ থেকে বিভিন্ন সময় নগদ প্রায় চার লাখ ৮০ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়েছে। কিন্তু তাকে কোন প্রকল্প দেয়া হয় নাই। এমনকি একাধিকবার তাগাদা দেয়ার পরও উৎকোচের টাকা ফেরত দেয়া হয়নি। এতে শোকে-তাপে তার স্বামী মারা গেছেন। তিনি উৎকোচের টাকা ফেরত পাওয়াসহ চেয়ারম্যানের নানা অনিয়ম ও দূনীতির তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
ফরিদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহম্মদ আলীর সাথে গত শুক্রবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেমরা ইউপি চেয়ারম্যান মাহ্ফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, গত উপজেলা নির্বাচন নিয়ে চেয়ারম্যানের সাথে মেম্বরদের বিরোধ রয়েছে। অভিযোগ পত্রে আট জন মেম্বর স্বাক্ষর করেছেন। এরমধ্যে মৃত- হাতেম আলী মেম্বরের পক্ষে তার স্ত্রী স্বাক্ষর করেছেন, যা আইন গতভাবে বৈধ নয়। দুই তৃতীযাংশ মেম্বর অনাস্থা আনলে অথবা আবার নতুন করে অভিযোগ পত্র দাখিল করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।
ডেমরা ইউপি চেয়ারম্যান মহ্ফুজুর রহমানের সাথে গত শুক্রবার একাধিক বার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার চারটি নাম্বারই বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে অভিযোগের ব্যাপারে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।