পাবনা জেলায় ৬৭ হাজার হেক্টরে নয় লাখ টন পেঁয়াজ ও রসুন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ

0
311

শফিউল আযম, বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা ঃ
চলতি রবি মওসুমে পাবনা জেলায় ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় সাত হাজার হেক্টর জমিতে বেশী আবাদ হয়েছে। অর্থাৎ আবাদ হয়েছে প্রায় ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে। পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাত লাখ ২৮ হাজার টন। এছাড়া ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে রসুন আবাদ হয়েছে। যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়, তা হলে এবার পেঁয়াজ ও রসুনের আশাতীত ফলন পাওয়া যাবে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেশি ছিল। পেঁয়াজ ও রসুন রোপনের জন্য গড়ে প্রতিজন শ্রমিকের দিন হাজিরা ছিল ৫০০ টাকা। তবে এবার বাজারে রাসায়নিক সার এবং কম্পোস্ট সারের দাম বেশি।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতর (খামার বাড়ী) সূত্রে জানা যায়, চলতি মওসুমে পাবনা জেলায় পেঁয়াজ প্রতি হেক্টরে ১৪ টন হিসেবে সুজানগর উপজেলায় ২০ হাজার হেক্টরে দুই লাখ ৮৪ হাজার টন, সাঁথিয়ায় ১৬ হাজার ৯৭০ হেক্টরে দুই লাখ ৩৮ হাজার টন, পাবনা সদরে পাঁচ হাজার হেক্টরে ৭০ হাজার টন, ঈশ্বরদীতে এক হাজার ৫০০ হেক্টরে ২১ হাজার টন, বেড়ায় তিন হাজার হেক্টরে ৪২ হাজার টন, ফরিদপুরে এক হাজার ৫০০ হেক্টরে সাড়ে ২১ হাজার টন, চাটমোহরে এক হাজার ৫০০ হেক্টরে সাড়ে ২১ হাজার টন, ভাঙ্গুড়ায় এক হ্াজার ৫৩০ হেক্টরে ২১ হাজার ৪২০ টন ও আটঘড়িয়ায় এক হাজার হেক্টর জমিতে ১৪ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। জেলার সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলায়। এ ছাড়া ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে রসুন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার টন।
চলতি রবি মওসুমে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধান করা হয়েছে ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৭৬ হাজার টন। এবার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ হাজার হেক্টরের বেশী জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। অর্থাৎ ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক লাখ ৪০ হাজার টন বেশী পেঁয়াজ উৎপাদন হবে। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় দাম বেড়ে আটগুন হয়ে যায়। দাম বেশি হওয়ায় কৃষকেরা লাভের আশায় বেশি জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। এবার পেঁয়াজ এর দানা (বীজ) বিক্রি হয় বেশি দামে। গত বছর প্রতি কেজি বীজ বিক্রি হয়েছিল এক হাজার ৫০০ টাকা দরে। এবার বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি চার হাজার থেকে চার হাজাার ৫০০ টাকা দরে।
এছাড়া এবার প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে রসুন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার টন। গত বছর মওসুমের শুরু থেকেই রসুনের বাজার ছিল চড়া। এবার কৃষকেরা রসুন চাষের জন্য আশ্বিন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই জমি প্রস্তুত রাখে। চলনবিল এলাকার কৃষকেরা বন্যার পানি নামার পরপরই বিনা চাষে রসুন রোপন করে থাকে। জেলায় সবচেয়ে বেশি রসুন আবাদ হয়ে থাকে চাটমোহরে।
প্রতি হেক্টরে পেঁয়াজ উৎপাদন গড় হিসাব ধরা হয়েছে ১৪ টন এবং রসুন উৎপাদন মাত্রা ১২ টন। পাবনার কৃষকরা পেঁয়াজ ও রসুনের জমিতে সেচ দেয়া শুরু করেছে। কোথায়ও ৩টি আবার কোন কোন এলাকায় ৪টি সেচ দেয়া হয়। কৃষকেরা পেঁয়াজ ও রসুনের জমিতে সেচ দেয়া শুরু করেছে। এই অঞ্চলের কৃষকেরা পিয়াজ ও রসুনের জমিতে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এ ব্যাপারে কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছে। ট্রিপল সুপার ফসফেট (টি.এস.পি), মিউরেট অব পটাশ (এমপি) এবং ইউরিয়া সারের দাম কমায় কৃষকেরা পরিমাণ মত সার প্রয়োগ করতে পারছে। দেশে সর্বাধিক পেঁয়াজ উৎপাদন হয় পাবনা জেলায়।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল কাদের জানান, এবার পেঁয়াজ বীজ এর দাম বেশি ছিল এবং বীজের মানও ভাল ছিল। সুজানগর উপজেলার মানিকহাট, উলাট, বামনদি, চরদুলাই, বনকোলা এলাকার কৃষকরা জানান, এবার পেঁয়াজ বীজে ভাল চারা হয়েছে। বিস্তীর্ন গাজনা বিল এলাকা এবং সাঁথিয়ার ঘুঘুদহ বিল এলাকার গৌরিগ্রাম, বিষ্ণুপুর, ক্ষেতুপাড়া, চরপাড়া, রঘুরামপুর, মাছগ্রামের কৃষকেরা হাজার হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। সে সময় ক্ষেত মজুরের অভাব ছিল। প্রতিদিন একজন ক্ষেত মুজুরকে দিতে হয়েছে নগদ ৫০০ টাকা থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা। এছাড়া দুপুরের খাবার দিতে হয়েছে।
সুজানগরের চর দুলাই গ্রামের আদর্শ কৃষক মোত্তালিব মিয়া জানান, প্রতি বিঘা জামিতে পেঁয়াজ বীজ রোপনে ২০ জন শ্রমিক কাজ করেছে। এই ২০ জন শ্রমিকের শ্রম মূল্য ও খাবার বাবাদ খরচ হয়েছে ১১ হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা। রাসায়নিক সার ও কম্পোস্ট সার দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা এবং সেচ খরচ লাগবে, এক হাজার টাকা। নিড়ানী খরচ লাগবে তিন হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া উত্তোলন ও পরিবহন খরচ যোগ হলে প্রতি বিঘায় খরচ হয় প্রায় ১৮ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ৫০ থেকে ৫৫ মন। যদি বর্তমান বাজার দর ঠিক থাকে তাহলে মৌসুমের শুরুতে পেঁয়াজ বিক্রি হবে প্রতিমন দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি বিঘা জমির পেঁয়াজ বিক্রি করে কৃষকের লাভ হবে ৮০ হাজার থেকে ৮৫ হাজার টাকা।
এছাড়া এবার প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে রসুন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার টন। জেলার চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলায় বিনাচাষে রসুন আবাদ হয়ে থাকে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই কৃষকেরা রসুন বীজ রোপন করেছে। পেঁয়াজ এবং রসুন পরিচর্যায় কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছে। পেঁয়াজের শিকড় পঁচা ও লেদা পোকার কবল থেকে রক্ষা পেতে কৃষকরা নিম তেল ও ভেষজ ওষুধ ব্যবহার করতে শুরু করেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here