বেড়ায় আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের দফায় দফায় সংঘষর্; ৩০টি গাড়ী ভাংচুর ৫৫ জন আহত

0
383

শফিউল আযম, বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা ঃ
পাবনার বেড়া উপজেলা পরিষদ উপ-নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রেজাউল হক বাবু শনিবার সন্ধ্যায় বেড়া সিঅ্যান্ডবি বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় নিজ দলের প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়েছেন। এসময় উভয় গ্রুপের মধ্যে ধফায় দফায় সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। প্রায় দুই ঘন্টা স্থায়ী এ সংঘর্ষে উভয় পক্ষে অন্তত ৫৫ জন আহত এবং ৩০ গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। এসময় সিঅ্যান্ডবি’র সকল দোকান-পাট বন্ধ হয়ে যায়। মহাসড়কের উভয় পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। সংঘর্ষের জের ধরে আবারও গতকাল রবিবার ভোরে ৩জনকে মারপিট করে আহত করা হয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
শনিবারের পরিকল্পিত হামলার প্রতিবাদে গতকাল রোববার সকাল ১০ টায় উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক আব্দুর রশিদ দুলালের নেতৃত্বে সিঅ্যান্ডবি বাসষ্ট্যান্ড এলাকা প্রদক্ষিণ করে গোলচত্বরে প্রতিবাদ সভা করে। প্রতিবাদ সভায় আব্দুর রশিদ দুলাল হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।
বেড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক আব্দুর রশিদ দুলাল জানান, বেড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদেরর মৃত্যুতে শূন্য আসনে শুক্রবার জাতসাখিনী ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবুকে মনোনয়ন দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলের মনোনয়ন বোর্ড। দলের সিদ্ধান্ত মেনে মনোনয়ন প্রাপ্ত বাবুকে নিয়ে আমরা শনিবার বিকেলে ঢাকা থেকে এলাকায় ফিরে আসি। সভানেত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে স্থানীয় হাজারো জনতা কাজিরহাট ঘটে দলের প্রার্থীকে বরণ করে নেয়। পরে দলের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে বেড়া সিঅ্যান্ডবি বাসষ্ট্যন্ড এলকায় পৌছামাত্র স্থানীয় সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু ও তার ভাই আব্দুল বাতেনের সমর্থক ময়ছের ও চৌদ্দর সহযোগীরা আমাদের গাড়ীবহরের পথরোধ করে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় তারা রেজাউল হক বাবুর গাড়িসহ ৩০টি গাড়ি ভাংচুর করে। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে মঞ্জু, কালু, আলফু খান, বাধন শেখ, মিরাজ হোসেন, তারেক, আলী ড্রাইভার, জুলহাস, আওয়াল মাষ্টার, মনছের মোল্লা, আজাদ মুন্সী, স্বাধীনসহ অন্তত ৫৫ জনকে আহত হয়েছে। পরে স্থানীয় আহতদের উদ্ধার করে বেড়া, পাবনা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছ্।ে
বেড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক আব্দুর রশিদ দুলাল আরো বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু এমপির ভাই আব্দুল বাতেন নিজ অপকর্মের কারনে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বেড়া পৌর মেয়র পদ থেকে বরখাস্থ হয়েছেন। বিষয়টির জন্য এমপি টুকু অকারনেই আমাদের দায়ী করছেন। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সম্পর্কীত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হওয়ায় পুলিশ প্রশাসনকে তার নিজের মতো করে ব্যবহার করছেন। আজকের হামলার সময়ও পুলিশ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। আমরা বেড়া থানা পুলিশের এমন আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তাদের বদলির দাবী করছি।
আওয়ামীলীগ মনোনীত বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রেজাউল হক বাবু বলেন, বড় দল হিসেবে দলের অভ্যন্তরে মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতেই পারে। কিন্তু সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অমান্য করে এমন হামলা মেনে নেওয়া যায়না। তিনি এই হামলার সাথে জড়িতদেও দ্রুত গ্রেফতার কওে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেছেন।
আওয়ামী লীগ নেতা ময়ছার খা বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় আমরা কয়েকজন পাবনা জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল হাকিম বসের অফিসে বসে গল্প করছিলাম। এ সময় আব্দুর রশিদ দুলালের নেতৃত্বে একটি মিছিল সিঅ্যান্ডবি বাসষ্ট্যান্ডে এসে এমপি অ্যাড. সামছুল হক টুকু এবং বেড়া পৌর মেয়র (সাময়িক বরখাস্ত) আব্দুল বাতেনের বিরুদ্ধে অশালীন ভাষায় শ্লোগান দিতে থাকে। এর এক পর্যায়ে তারা অফিস লক্ষ্য করে আতশবাজী ছুড়ে মারে এবং হামলা চালায়। বাসষ্ট্যান্ডের লোকজন আমাদের নিরাপদ দুরত্বে নিয়ে যায়। হামলায় আমাদের তিন কর্মী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। দুলাল গ্রুপের অভ্যন্তরীণ কন্দোলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ইল্টো আমাদের উপর দোষ চাপানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বেড়া সার্কেল এর সহকারী পুলিশ সুপার শেখ জিল্লুর রহমান ঘটনার সতস্যতা স্বীকার করে বলেন, সেখানে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর লোকজনের উপর কতিপয় দূর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছেন এবং কয়েকটি বিস্ফোরনের ঘটনাও ঘটেছে। প্রার্থীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। বর্তমানে ওই এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে। প্রভাবশালী কারো দ্বারা পুলিশ প্রভাবিত নয়। অভিযোগের সত্যতা পেলে যে কারো বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর সাথে মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা কারা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ সংঘর্ষের ঘটনায় সানিলা গ্রামের মজিদ মোল্লার ছেলে জাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে নামিক ৩৮ জনসহ অজ্ঞাত আরো ৪০-৫০ জনকে আসামী করে সাঁথিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে বলে থানা সূত্রে জানা গেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here