শফিউল আযম, বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা ঃ
অবৈধভাবে নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করায় অসময়ে (শুস্ক মওসুমে) যমুনার পশ্চিম পাড়ের ৫টি গ্রামে মারাত্মক ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ক’দিনের ভাঙনে প্রায় ৫০টি বসতবাড়ীসহ ৩০ একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের হুমকীর মুখে পড়েছে জামে মসজিদ, কবরস্থান, মন্দির, চরপেঁচাকোলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যমুনার বুকে বিশাল চর জেগে উঠায় নদীর ¯্রােতধারা সরাসরি পশ্চিম পাড়ে আঘাত করছে। এদিকে ভলগেট ও ড্রেজারের সাহায্যে নদীর পাড় ঘেষে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় এই ভাঙন শুরু হয়েছে বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন।
যমুনার পশ্চিম পাড়ে পাবনার বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়নের চরপেঁচাকোলা এবং সিরাজগঞ্জ জেলার শাহাজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের দেওয়ায় তারটিয়া, পাইখন্দ, চরপাইখন্দ ও চিথুলিয়া গ্রামে যমুনায় ভাঙন শুরু হয়েছে। যমুনা নদীর পশ্চিমপাড় ঘেষে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর গভীরতা বেড়ে যাওয়ায় স্্েরাতধারা সরে এসে পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে প্রবাগিত হচ্ছে। এছাড়া নদীর বুকে বিশাল চর জেগে ওঠায় পানি প্রবাহ বাধা প্রাপ্ত হয়ে সরাসরি পশ্চিম পাড়ে আঘাত করছে। এতে পশ্চিমপাড়ের ৫টি গ্রামে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) সরেজমিন ভাঙন এলাকা পরিদর্শন কালে কথাহয় চিতুলিয়া গ্রামের লাল মিয়া, আফসার প্রামানিক, ছালাম মেম্বর, আকবর প্রামানিক, বুলবুলি, অর্চনা, রুবি, মোঃ আলেক প্রামানিক, সোরাব আলী, নওশের, ইয়াদ আলী, খোরশেদ আলীর সাথে কথা হয়। তারা জানান গত ক’দিনের ভাঙনে তাদের বসতবাড়ীসহ প্রায় ৫০টি বসতবাড়ী, ৩০ একর ফসলী জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুরাতন বাঁধে ঠাঁই না হওয়ায় তারা অন্যের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে। চিতুলিয়া গ্রামের কাছে নির্মানাধীন নতুন বণ্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ থেকে যমুনা নদী প্রায় এক হাজার ফুট দুর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলে নতুন বাঁধ ভাঙনের হুমকীর মুখে পড়বে। ইতোমধ্যে পুরাতন বণ্যানিয়ন্ত্রন বাঁধের আংশিক নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাঁধে আশ্রিত পরিবারগুলোর মাঝে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে তারা জানান।
চরপেঁচাকোলা গ্রামের আলহাজ্ব মাওলানা আঃ সোবহান, ডাক্তার চাঁদ আলী সরদার, রুস্তম সরদার, মোঃ গোলাম মোস্তফা, আনিছুর রহমান, আলহাজ্ব আওরঙ্গজেব, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষক রতন কুমার দাস, শিক্ষক মিনহাজ উদ্দিন, শিক্ষিকা নাসরিন পারভীনসহ অনেকেই অভিযোগ করে জানান, চরপেঁচাকোলা ও চিতুলিয়া গ্রামের কোল ঘেষে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোনের ফলে ভাঙন বন্ধ হচ্ছে না। তারা বলেন, ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতার নেতৃত্বে একটি চক্র দেশি ড্রেজার ও ভলগেটের সাহায্যে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘন ফুট বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করে বিক্রি করে আসছে। ফলে এই শুস্ক মওসুমেও নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য মানববন্ধনসহ প্রসাশনের কাছে লিখিত অভিযোগ করে কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের প্রাক্তন ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুস ছালাম জানান, গত ক’দিনের ভাঙনে দেওয়ান তারটিয়া গ্রামের আংশিক, পাইখান্দ গ্রামের ১০টি বাড়ী, চক পাইখান্দ গ্রামের ১৫টি বাড়ী, একটি জামে মসজিদ ও একাট কবরস্থান এবং চিথুলিয়া গ্রামের ১২টি বাড়ীসহ শতাধিক বিঘা ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একই ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য মোছাঃ আলেয়া খাতুন জানান, চিথুলিয়া গ্রামের একমাত্র মন্দিরটি যে কোন সময় নদীতে ভেঙ্গে যেতে পারে। ভাঙন কবলিত গ্রাম গুলোতে প্রায় ৬০০ পরিবারের বসবাস ছিল। ভাঙন আতঙ্কে গ্রামের বাসিন্দারা বাড়ীর ভিটে থেকে ঘর ভেঙ্গে অন্যাত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বর চরপেঁচাকোলা গ্রামের বাসিন্দা মো. মিজানুর রহমান বলেন, গত বছরের আগষ্ট মাসে ভয়াবহ নদী ভাঙনে তার বাড়ীসহ গ্রামের প্রায় আড়াই শতাধিক বাড়ী, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ৫০০ একর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কয়েক দিনে এ গ্রামের প্রায় ৩০ বিঘে ফসলি জমি নদীতে ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কবরস্থান ও মাদ্রাসা ভাঙনের হুমকীর মুখে পড়েছে। নদীর পাড় ঘেষে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব নয় বলে তিনি জানান।
বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল হামিদ জানান, চরপেঁচাকোলা ও চিতুলিয়া গ্রামে যমুনা নদীর ভাঙনরোধ কাজের জন্য প্রায় চার কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এই কাজের দরপত্র আহবান করা হয়েছে। দরপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হলেই ভাঙন রোধের কাজ শুরু করা হবে।