শিশুদের অতিরিক্ত পড়ার চাপ দেবেন না

0
412

পড়াশোনার জন্য শিশুদের ওপর অতিরিক্ত চাপ না দিতে অভিভাবক, শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৯-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিশুদের শিক্ষার জন্য অতিরিক্ত চাপ দেওয়া উচিত না। তাদের পড়াশোনাটা তারা যেন খেলতে খেলতে, হাসতে হাসতে সুন্দরভাবে নিজের মতো করে নিয়ে পড়তে পারে সেই ব্যবস্থাটাই করা উচিত। সেখানে অনবরত পড়, পড়, পড় বলাটা বা তাদের ধমক দেওয়া, আরো বেশি চাপ দিলে শিক্ষার ওপর আগ্রহটা কমে যাবে। একটা ভীতি সৃষ্টি হবে।

সেই ভীতিটা যেন সৃষ্টি না হয় সে জন্য আমাদের শিক্ষক ও অভিভাবকদের আমি অনুরোধ করব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সময় আমরা দেখি প্রতিযোগিতাটা শিশুদের মধ্যে না হলেও মায়েদের মধ্যে বা বাবা-মায়ের মধ্যে একটু বেশি হয়ে যায়। এটাও কিন্তু একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা বলে আমি মনে করি। কারণ সব শিক্ষার্থীর তো সমান মেধা থাকবে না। সবাই সমানভাবে করতে পারবে না। স্বভাবতই স্বাভাবিকভাবে যার যতটুকু আসবে তাকে সেভাবে সহযোগিতা করতে হবে। শিক্ষাটাকে আপন করে নিয়ে সে যেন শিখতে পারে। শিশুরা কেবল ঘরে বসে শিখবে না, দেখেও শিখবে।’

অনুষ্ঠানে শিশুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা আমাদের ভবিষ্যৎ। নিজেদের গড়ে তুলবে, লেখাপড়ায় মনোযোগ দেবে। পাশাপাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চা, যার যে গুণ আছে, সেটা যাতে বিকশিত হয়।’ তিনি বলেন, ‘শিশুদের মধ্যে থাকা সুপ্ত প্রতিভা যেন বিকশিত হয় সে জন্য আমাদের সবার কাজ করতে হবে। আজকের শিশুরাই ভবিষ্যতের কর্ণধার। হয়তো এর মধ্যে থেকেই কেউ আমার মতোই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের বিশেষ চাহিদা রয়েছে তাদের শেখাতে হবে। এরাও মানুষ, একই সাথে পাশাপাশি থাকবে। তাদের দেখাশোনার দায়িত্ব যারা সুস্থ শিশু তারাই নেবে। বন্ধু হবে, তারা পড়াশোনা করবে।’

শিশুদের ইংরেজি শিক্ষা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের একটা প্রবণতা আছে, অনেকে ধারণা করেন ইংরেজি শিক্ষাটা না দিলে বোধ হয় শিক্ষাই গ্রহণ করা হলো না। এই ধারণাটা কিন্তু ঠিক নয়।’

প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘একটা বিষয় আমি দেখেছি ক্লাস ওয়ানে ভর্তির জন্য ছাপানো প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়। ওয়ানে ভর্তির জন্য যদি ছাপানো প্রশ্নপত্র দিয়েই পরীক্ষা দিতে পারে তাহলে আর ক্লাস ওয়ানে শিখতে যাবে কী? এই প্রক্রিয়াটা কিন্তু বাতিল করতে হবে। এলাকাভিত্তিক যেসব প্রাইমারি স্কুল আছে, এটা ঢাকা শহর হোক, সারা বাংলাদেশ হোক—ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আরো ভালোভাবে নিতে হবে। ওই এলাকার সব শিশুর স্কুলে ঢোকার বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্কুলে নিতে হবে।’

বর্তমান সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেন স্বাগত বক্তব্য দেন।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ‘প্রাথমিক শিক্ষা পদক’ বিতরণ করেন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের ওপর একটি ভিডিওচিত্রও প্রদর্শিত হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here