৩০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যায়ে তাড়াশ -রাণীরহাট সড়কের মেরামত কাজে নিন্ম মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

0
400

লিপন সরকার চলনবিল প্রতিনিধি :সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় তাড়াশ -রাণীরহাট সড়কের তাড়াশÑরাণীরহাট-শেরপুর (জেড-৫০৪৯) সড়কের ১ম কিলোমিটার হতে ১৭তম কিলোমিটার পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ, মজবুতিকরণ ও মেরামত কাজে নিন্ম মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে সিরাজগঞ্জ সড়ক বিভাগ (সওজ) কয়েক দফা সর্তকীকরণ চিঠি দিলেও নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান মো. ময়েন উদ্দিন (বাঁশি) লিমিটেড নিন্ম মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করেই চলছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, জেলা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প (রাজশাহী জোন) থেকে রাজশাহী অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় হতে ৩০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যায়ে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ-রাণীরহাট সড়ক প্রশস্তকরণ, মজবুতিকরণ ও মেরামত কাজের দরপত্র আহব্বান করা হয়।
এতে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মো. ময়েন উদ্দিন (বাঁশি) লিমিটেড তাড়াশ -রাণীরহাট সড়কের প্রশস্তকরণ, মজবুতিকরণ ও মেরামত কাজের কার্যাদেশ পান।
সেই অনুসারে গত ২৫ মে সিরাজগঞ্জ -৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ আনুষ্ঠানিক ভাবে তাড়াশ -রাণীরহাট সড়কের তাড়াশÑরাণীরহাট-শেরপুর (জেড-৫০৪৯) সড়কের ১ম কিলোমিটার হতে ১৭তম কিলোমিটার পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ, মজবুতিকরণ ও মেরামত কাজের উদ্বোধন করেন। পরে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ১৭.০০ কিলোমিটার ওই সড়কে কাজ শুরু করেন।
ইতিমধ্যেই সড়ক প্রশস্তিকরণের জন্য ৮-৯ কিলোমিটার পার্শ্ব সড়ক খনন করে সেখানে বালি ও খোয়া ফেলা হযেছে। কিন্ত যে বালি ফেলা হচ্ছে তা মূলত মাটি মিশ্রিত বালি। আর খোয়া গুলো বেশির ভাগ ইটের আধলা আকৃতির।
সরেজমিনে তাড়াশ-রাণীরহাট সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, রাণীরহাট থেকে দক্ষিণের রোকনপুর এলাকা হতে গোন্তা এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৩-৪ কিলোমিটার সড়কের কাজে থেমে থেমে নিন্ম মানের পলি মাটি মিশ্রিত বালি সড়কের প্রসস্তিকরণের কাজে ব্যহার করা হচ্ছে।
আবার সড়কের বিভিন্ন অংশে ধুলো মিশ্রিত বালি ব্যবহারও করা হয়েছে এমন অভিযোগ ও করেন তালম ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডেও ইউপি সদস্য মো. আব্দুল আজিজ। তিনি আরো জানান, নাটোরের সিংড়া, বগুড়ার শেরপুর ও সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার লাখ লাখ মানুষের চলাচল ও পণ্য পরিবহণের জন্য অতি গুরুত্বপুর্ণ সড়কের মেরামত কাজে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান নিন্ম মানের বালি ও খোয়া ব্যবহার করার বিষয়টি তিনি স্থানীয় এমপিকে মৌখিকভাবে বলেছেন।
এছাড়া নিয়ম অনুযায়ী নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের কাজের বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত সিটিজেন চার্টার লাগানোর নিয়ম থাকলে সড়কের কোথাও তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি পুরো সড়কে কাজ চললেও সড়ক বিভাগের কোন তদারকি কর্মকর্তার দেখা মেলেনি।
এ প্রসঙ্গে মো. ময়েন উদ্দিন (বাঁশি) লিমিটেড’র ঠিকাদার দুলাল হোসেন মুঠোফোনে জানান, সড়কে সামান্য কিছু খারাপ বালি ভুলক্রমে ফেলা হয়েছিল । পরে তা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।
কিন্তু একাধিক এলাকবাসাী অভিযোগ করে বলেন, শুধু বালি নয় সেখানে যে ইটের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে সেই সকল ইটের আকৃতি অনেক বড়। ফলে নিন্ম মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় সড়কের প্রসস্তিকরনে কাজের গুনগত মান একেবারেই নিন্ম । ফলে সড়কটি মেরামত ও প্রশস্তকরণের পর তা কতদিন টেকসই হবে তা নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেছেন সচেতন এলাকাবাসী।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ -রানীরহাট সড়কের তদারকি কর্মকর্তা সিরাজগঞ্জ সড়ক বিভাগের (সওজ) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার পারভেজ জানান , ওই সড়কে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান পলিমাটি মিশ্রিত নি¤œ মানের বালি ব্যবহারের বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। এ কারণে ওই নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে কয়েক দফা লিখিতভাবে সর্তকীকরণ চিঠিও দেয়া হয়েছে এবং মেরামত কাজে ব্যবহার করা বালি সংগ্রহ করে তার গুনগত মান যাচাই করতে রাজশাহী প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) এ পাঠানো হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ সড়ক বিভাগের (সওজ) র নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম (পিকে) জানান, তাড়াশ -রাণীরহাট সড়কের নি¤œ মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় ঠিকাদারকে লিখিত ভাবে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া যথাযথভাবে কাজটি করার জন্য ঠিকাদারকে মৌখিকভাবে বলাও হয়েছে। এতে কাজ না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ দ্রুতই নেয়া হবে।
তাড়াশ-রাণীরহাট সড়কের মেরামত কাজ নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ বলেন, আমি দুর্নীতি করিনা এবং দুর্নীতিকারীকে প্রশ্রয়ও দেই না। ওই সড়কে নিন্ম মানের কাজ হলে বিষয়টি জেনে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। এছাড়া তিনি আরো বলেন, সড়কটি মেরামতের পর ১০ বছর টেকসই হতে হবে সে পরিমাণ সরকারী অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সুতরাং মেরামত কাজে অনিয়ম সহ্য করা হবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here