কিছু মানুষের জীবনের গল্প অকল্পনীয়। সেই গল্প হাজারো মানুষের প্রেরণার উৎস। যারা অদম্য তারা সবকিছু পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কোনো বাধা নয়, সেটি প্রমাণ করেছে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার তামান্না নূরা। শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে পেছনে ফেলে সে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলছে সমানে। জন্মগতভাবেই তার দুই হাত ও এক পা নেই। শরীরে শুধু একটিমাত্র পা-ই তার সম্বল। সে পায়ে লিখেই এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল তামান্না। এক পায়ে লিখে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, বাংলা বাদে প্রত্যেকটি বিষয়ে এ প্লাস পেয়েছে সে। যশোরের ঝিকরগাছার বাঁকড়া জেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবার পরীক্ষায় অংশ নেয়। জেএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছিল তামান্না নূরা।
ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির মেয়ে তামান্না নূরা। অদম্য এই মেয়েটি প্রথম শ্রেণি থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা পর্যন্ত মেধা তালিকায় শীর্ষে ছিল। পাশাপাশি এডাস বৃত্তি পরীক্ষাও বৃত্তি পেয়েছিল। ২০১৩ সালে প্রাথমিক সমাপনী (পিইসি) ও ২০১৬ সালে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়।
তামান্নার বাবা রওশন আলী বলেন, মেয়েটি শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় অর্থের অভাবের পাশাপাশি সামাজিকভাবেও অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে কখনো ভেঙে পড়ি নাই। তামান্নার মা মেয়ের একটি পায়ের উপর ভর করেই সব ধরনের শিক্ষা দিয়েছে। মায়ের কাছ থেকে অক্ষরজ্ঞান পেয়েছে সে। তিনি আরো বলেন, বাড়ি থেকে দূরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও নিয়মিত পাঠানো সম্ভব ছিল না। তাই স্থানীয় আজমাইন এডাস স্কুলে তাকে নার্সারিতে ভর্তি করা হয়। তার প্রবণ ও মেধাশক্তি খুবই ভালো। যেকোনো পড়া একবার শুনলেই আয়ত্ব করতে পারে। তামান্নার বাবা জানান, পায়ের আঙুলের ফাঁকে চক ধরিয়ে লেখা শুরু করে। এরপর কলম ধরিয়ে লেখা আয়ত্ব করে সে। ধীরে ধীরে পা দিয়ে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টানো, পায়ের আঙুলে চিরুনি ধরে মাথা আঁচড়ানো। চামচ দিয়ে খাওয়া সব কাজ করতে পারে। ঝিকরগাছার বাঁকড়া জে কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিন খান বলেন, তামান্না অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে মেধার সাক্ষর রেখেছে। জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। এবার এসএসসিতেও ভালো ফলাফল করলো। শারিরীক প্রতিবন্ধী হিসেবে ২০ মিনিট বাড়তি সময় পেয়েছিল। তিনি আরো জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী সবাই তামান্নাকে সহযোগিতা করেছিল। তার বাড়ি গিয়েও শিক্ষকরা পড়িয়েছিল। সহপাঠীরা বাড়ি থেকে স্কুলে নিয়ে আসতো। আবার বাড়িতেও পৌঁছে দিত। সবার সহযোগিতা এবং নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে স্বপ্ন জয়ের পথে এগিয়ে চলেছে তামান্না। তার ফলাফলে আমি খুশি।