করোনা ভাইরাস, বিশ্বে আক্রান্ত ৬৪ হাজার

0
417
চীনে ছয় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু উন্নয়নশীল দেশে ব্যবস্থাপনা জোরদারের তাগিদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভিন্ন দেশে মাস্ক-স্যানিটাইজার সংকট চীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সক্ষম :ট্রাম্প

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত বিশ্বের ৬৪ হাজারেরও বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে শুধু চীনেই রয়েছে ৬৩ হাজার। দেশটিতে এক দিনে ডাক্তারসহ ছয় জন স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন এই পেশার আরো ১ হাজার ৭১৬ জন। এছাড়া সিঙ্গাপুরে চার বাংলাদেশিসহ ৫৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। চীন, সিঙ্গাপুর, জাপান, হংকংসহ আক্রান্ত দেশগুলোতে মাস্ক ও হাত জীবাণুমুক্ত করার স্যানিটাইজারের সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে করোনা ভাইরাস ব্যবস্থাপনা নিয়ে চীন সরকার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, চীন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। বৃহস্পতিবার একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাত্কারে তিনি এ কথা বলেন। এমন অবস্থায় করোনা ভাইরাসকে ‘বিশ্বের অন্য দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে’ বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেডরস আধানম গোব্রিয়াসেস। তিনি বলেছেন, ‘চীনের মতো উন্নত দেশ এই ভাইরাস মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে। তাই উন্নয়নশীল দেশগুলোসহ সারা বিশ্বকে এটা মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’

করোনা ভাইরাসকে এতদিন নভেল বা নতুন করোনা ভাইরাস বা সংক্ষেপে ২০১৯-এনসিওভি বলা হচ্ছিল। এ ভাইরাস যে রোগ সৃষ্টি করছে, তার নতুন নাম দেওয়া হয়েছে কভিড-১৯। চীনের উহানে হাসপাতালগুলোতে এখন মোট ৩৭ হাজার রোগীকে চিকিত্সাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে ১ হাজার ৬৮৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শুক্রবার নাগাদ দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৮০ জনে। আর বিশ্বব্যাপী সংক্রমিত হয়েছে ৬৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যর্থতার দায়ে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যে হুবেইয়ের প্রাদেশিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে। গতকাল হুবেই প্রদেশে নতুন করে শতাধিক প্রাণ কেড়েছে নিয়েছে কভিড-১৯। তাই হুবেই প্রদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এখন প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েছে। একই অবস্থা ভাইরাসটির উত্পত্তিস্থল উহান শহরে। কভিড-১৯ প্রতিরোধে বিশেষায়িত কিছু হাসপাতাল স্থাপনের পরেও সেখানে নতুন রোগীর চাপ সামাল দিতে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৭২৩ জন রোগী চিকিত্সাসেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে বলে জানা গেছে।

কম ঝুঁকিতে বাংলাদেশ!

বাংলাদেশ আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাস সন্দেহে রংপুরে ভর্তি আরেক রোগীর রক্ত পরীক্ষায় নেগেটিভ ধরা পড়েছে। তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস বা কভিড-১৯ নিয়ে বাংলাদেশের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিভিন্ন ধরনের ‘রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট’ করে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা যেসব দেশ চিহ্নিত করেছে, বাংলাদেশ সেই তালিকায় নেই। তিনি বলেন, ‘চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তাই যাত্রীদের মাধ্যমে এই ভাইরাস প্রবেশের ঝুঁকি এড়াতে স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। এর মানে এই নয়, আমাদের অবস্থা অনেক জটিল, আতঙ্কিত হতে হবে।’ তবে কোনো রোগী যদি শনাক্ত হয়, তাকে অন্যদের থেকে আলাদা রাখার বিষয়ে সতর্কতামূলক প্রস্তুতি সারাদেশেই নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

প্রমোদতরিতে আক্রান্ত বেড়ে ২১৮

জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরের কাছে পৃথক করে রাখা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসে বৃহস্পতিবার আরো ৪৪ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে। এদের মধ্যে ৪৩ যাত্রী এবং একজন ক্রু। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ২৯ জনই জাপানি নাগরিক। সংক্রমণ ঠেকাতে কয়েক সপ্তাহ ধরে পৃথক করে রাখা প্রমোদতরীটির যাত্রী ও ক্রু মিলিয়ে মোট ২১৮ জনের দেহে কভিড-১৯ রোগ ধরা পড়েছে বলে জাপান টাইমস জানিয়েছে। এর আগে আক্রান্ত পাঁচ যাত্রীকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। তাদের সবাইকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

প্রমোদতরিটিসহ জাপানে কভিড-১৯ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২৪৭ এ পৌঁছাল। বৃহস্পতিবার দেশটি করোনা ভাইরাসে এক নারীর মৃত্যু খবরও নিশ্চিত করেছে। এ নিয়ে চীনের বাইরে তৃতীয় কারও মৃত্যু খবর মিলল। কভিড-১৯ এ মারা যাওয়া অশীতিপর ওই জাপানি নারী থাকতেন টোকিওর দক্ষিণ-পশ্চিমের কানাগাওয়া এলাকায়। মৃত্যুর পর তার করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত হন কর্মকর্তারা।

জাপানি গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ডায়মন্ড প্রিন্সেসের যে ৪৪ জনের আক্রান্তের খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে, তাদের মধ্যে ৪০ জনেরই বয়স ৭০ কিংবা এর উপরে। এর যাত্রীদের ৮০ শতাংশই ষাটোর্ধ্ব। ২১৫ জনের বয়স ৮০ ঘরে; ১১ জন পেরিয়েছেন ৯০। গত মাসে জাহাজে থাকা হংকংয়ের ৮০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর আরোহীদের পরীক্ষা করা শুরু হয়।

জাপানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কাতসুনোবু কেটো জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন কিন্তু আগে থেকে অসুস্থ ৮০ ঊর্ধ্ব ব্যক্তি, কিংবা যারা ডায়মন্ড প্রিন্সেসের জানালাবিহীন ঘরে আছেন তাদেরকে শুক্রবার সকালের মধ্যেই অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হবে। সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি যাত্রীর ডায়মন্ড প্রিন্সেসের ‘কোয়ারেন্টাইন’ অবস্থা আগামী বুধবার শেষ হওয়ার কথা। প্রমোদতরীটির আরো ২০০ ব্যক্তিকে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

লন্ডনে সম্মেলনে করোনা ভাইরাস রোগী

লন্ডনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সেন্টারে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন করোনা ভাইরাসের এক রোগী। এ কারণে সম্মেলনটিতে অংশ নেওয়া অন্তত আড়াইশ অংশগ্রহণকারীকে সতর্কতা জানিয়ে ইমেইল করা হয়েছে। শুক্রবার যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।

৬ ফেব্রুয়ারি ‘ইউকে বাস সামিট’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে ব্রিটেনের বাসমন্ত্রী ব্যারোনেস ভেরে অব নরবিটনও অংশ নিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য দফতরের পাঠানো এ মেইলে সম্মেলনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের জানানো হয়, কারো মধ্যে সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে তারা বাইরে না গিয়ে যেন নিজেদের ঘরেই থাকেন এবং ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের হেল্পলাইন ১১১’এ কল দেন। সম্মেলনে অংশ নেওয়া করোনা ভাইরাসের রোগী লন্ডনে বাসকারী চীনা নাগরিক। সম্প্রতি চীনে ভ্রমণ করা এ নারী লন্ডন আসার পরপরই অসুস্থ হয়ে পড়েন। লিওসাম হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তিন দিনের জন্য তিনি নিজের বাড়িতে গিয়েছিলেন। এসময়ই সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এ রোগীকে বর্তমানে লন্ডনের সেন্ট টমাস হাসপাতালে চিকিত্সা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মোট নয় জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here