গুলিতে এবার চেয়ারম্যান প্রার্থী নিহত

0
215

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন ঘিরে সহিংসতায় এবার চেয়ারম্যান প্রার্থী নিহত হয়েছেন। পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নে গতকাল শনিবার সকালে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলিতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (আনারস প্রতীক) ইয়াসিন আলম নিহত হন। দুই পক্ষের ১২ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় ৩০ জন।

নিহত ইয়াসিন আলম (৪০) বিদ্রোহী প্রার্থী সুলতান মাহমুদের চাচাতো ভাই ও ভাঁড়ারা গ্রামের মোজাহার খান মুজার ছেলে। জানা গেছে, ইয়াসিন নিজে প্রার্থী হলেও বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালাতে গিয়ে নিহত হন। এ ঘটনায় নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভাঁড়ারার কালুরপাগা এলাকার চারা বটতলার ইন্দারা মোড়ে এসব ঘটনা ঘটে। বিকেলে লাশ নিয়ে প্রায় ১২ কিলোমিটার হেঁটে পাবনা শহরের গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ সভা করা হয়েছে।

প্রার্থীর মৃত্যুতে ভাঁড়ারা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন স্থগিত করেছেন রিটার্নিং অফিসার মো. কায়সার। বিকেলে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়। ইয়াসিনকে নিয়ে এবারের ইউপি নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংতায় ৭৩ জনের মৃত্যু হলো।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী শরিফুল ইসলাম ও মকলেছুর রহমানের সূত্রে জানা যায়, সকালে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী (ঘোড়া প্রতীক) সুলতান মাহমুদের ১৫-২০ জন সমর্থক (ইয়াসিন আলমসহ) নির্বাচনী প্রচারে বের হয়। তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খানের লোকজনের সঙ্গে গোলাগুলি হয়। এতে ইয়াসিনসহ দুই পক্ষের অন্তত ২৫ জন গুরুতর আহত হয়। তাদের পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ইয়াসিনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। ছয়জনকে রামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

ভাঁড়ারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান মাহমুদ জানান, সাঈদ খান পরাজিত হওয়ার ভয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে পরিকল্পিতভাবে তাঁর কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে ২০ জন আহত হয়েছে। তাদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন বানচাল করার জন্য সাঈদ খানের পক্ষ থেকে আমার নির্বাচনী প্রচারে বাধা, মাইক ও অফিস ভাঙচুর এবং পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। আমার চাচাতো ভাই ইয়াসিনকে হত্যা করে সেই হুমকি কার্যকর করলেন সাঈদ।’

পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভাঁড়ারা ইউপির চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খান বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমার পক্ষে কালাম মেম্বারসহ লোকজন ভোট চাইতে গেলে সুলতান মাহমুদের লোকজন কামাল মেম্বারকে হাতুড়িপেটা করে। গতকাল সকালে আমি আহত মেম্বারকে দেখতে যাই। ফেরার পথে ইন্দারা মোড়ে সুলতানের সমর্থকরা সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে এসে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে আমাদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। আমার ছোট ভাই রহিমের পায়ে গুলি লাগে। লাফিয়ে ড্রেন পার হয়ে সে জীবন রক্ষা করে। এ ঘটনায় আমার ১০-১২ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে।’

পাবনা সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, ভাঁড়ারায় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় আট-দশজন গুলিবিদ্ধসহ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। একজন মারা গেছেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মাসুদ আলম জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াসিন আলমের লাশ নিয়ে তাঁর পক্ষের লোকজন বিক্ষোভ মিছিল ও শহরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। লাশ উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে।

আরো তিন স্থানে সহিংতায় আহত ১৪

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের নিকরাইল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মাসুদুল হক মাসুদের সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে নৌকার প্রার্থী মুহাম্মদ আব্দুল মতিন সরকারের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এতে ৯ নারীসহ ১০ জন গুরুতর আহত হয়েছে। গতকাল দুপুরে সিরাজকান্দি এলাকায় ভোট চাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। বগুড়ার কাহালু উপজেলার নারহট্ট ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী (নৌকা প্রতীক) রুহুল আমিন বেলাল ও দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আব্দুর রহিমের (আনারস প্রতীক) সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতায় চারজন আহত হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে বিবিরপুকুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। আব্দুর রহিম স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা।

ঝিনাইদহ সাধুহাটি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী নাজির উদ্দিনের কয়েকজন কর্মী শুক্রবার রাতে বোড়াই গ্রামে নির্বাচনী ক্যাম্পের সামনে পোস্টার লাগাচ্ছিলেন। এ সময় নৌকার প্রার্থী শফি উদ্দিন আহমেদ মিন্টুর কিছু সমর্থক বাধা দেয় এবং চেয়ার-টেবিলসহ নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করে পালিয়ে যায় বলে কাজী নাজির অভিযোগ করেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি রিটার্নিং অফিসারের কাছে এবং সদর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। তবে শফি উদ্দিন বলেন, ‘আমার কোনো নেতাকর্মী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here