চৌহালীতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে দূনীতি , তালিকায় ভুয়া নাম দিয়ে চাল আত্মসাতের অভিযোগ

0
302

শফিউল আযম, বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা ঃ
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার ঘোড়জান ইউনিয়নে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় ৯০ জনের নাম ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে চাল উঠিয়ে আত্মসাত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় প্রবাসী, সচ্ছল ব্যক্তি এবং অস্তিত নেই এমন মানুষের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির ১০ টাকা কেজির সুলভ মূল্যের চাল কয়েকজনের নামে উঠছে। অথচ কিছুই জানে না তারা। এখন প্রশ্ন উঠেছে, ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় তাদের নাম কে বা করা অন্তভূক্ত করেছে। তাদের নামে সুলভ মূল্যের বরাদ্দকৃত চাল কে তুলছে ?
জানা যায়, সরকার গরীব ও অসহায় মানুষদের জন্য সুলভ মূল্যে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির খাদ্যবান্ধব কর্মসুচি চালু করে। তিন বছর ধরে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার ঘোড়জান ইউনিয়নের ডিলার আব্দুস ছালাম খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় ৯০ জন প্রবাসী, সচ্ছল ব্যক্তি এবং অস্তিত নেই এমন মানুষের নামে চাল তুলে আত্মসাত করে আসছে বলে অভিয়োগ উঠেছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস সুত্রে জানা গেছে, চৌহালী উপজেলার ঘোড়জান ইউনিয়নের এক হাজার ২০০ জন দরিদ্র মানুষকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতাভুক্ত করা হয়। সেই চাল বিক্রির জন্য দুই জন ডিলার নিয়োগ করা হয়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বরদের মাধ্যমে হতদরিদ্রদের তালিকা করে প্রায় তিন বছর ধরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর চাল বিক্রি করা হচ্ছে। এই চাল বেশিরভাগ দরিদ্র মানুষ পাচ্ছে না। চৌহালী উপজেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি হজরত আলী মাষ্টারের ছেলে আবদুস ছালাম ডিলার তার তালিকায় প্রায় ৯০ জনের (১১১০ থেকে ১২০০সিরিয়াল) নাম অন্তভূক্ত করে চাল তুলে আত্মসাত করে আসছে। অনেকেই বিষয়টি জেনেও ডিলার প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা সাহস পায় না। এ প্রতিবেদক দায়িত্বশীল একটি সূত্রে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকাটি পেয়েছে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে সুবিধাভোগীর নামের তালিকায় পাওয়া গেছে, কয়েকজন প্রভাবশালী ও বিত্তশালী ব্যক্তির নাম। এছাড়া তালিকায় নাম আছে চরজাজুরিয়া গ্রামের পিয়াস, রুপিয়া খাতুন, রেহাইকাউলিয়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা তাদের কোন অস্তিত খুজে পাওয়া যায়নি। করোনাভাইরাসের কারণে ওই গ্রামগুলোর দিনমুজুররসহ নি¤œ আয়ের মানুষের কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকই পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে মনবেতর জীবন যাপন করছে। অথচ সরকারী খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল ভুয়া নামে তুলে আত্মসাত করা হচ্ছে।
এদিকে সুবিধাভোগীর তালিকায় নাম থাকা চরজাজুরিয়া গ্রামের কৃষি শ্রমিক আবদুল কাদের, আলমগীর হোসেন ও কান্দা ঘোড়জানের তাঁত শ্রমিক ভোলা সিকদারের নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির ১০ টাকার সুলভ মুল্যেও কার্ড এখনো চলমান। বরাদ্দকৃত চাল তাদের নামেই উঠছে। অথচ কিছুই জানে না তারা। কে বা কারা তাদের ভোটার আইডি কার্ড ব্যবহার করে তালিকায় নাম তুলে খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির চাল আত্মসাত করে আসছে।
চৌহালীর ঘোড়জান ইউনিয়নের ডিলার আব্দুস ছালাম মোবাইল ফোনে চাল আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির তালিকা তৈরিতে ডিলারের কোন হাত নেই। তালিকা তৈরি করেন ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর ও চেয়ারম্যান। পরে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ যাচাই-বাছাই করে তালিকা অনুমোদন দেন বলে জানিয়েছেন।
এবিষয়ে ঘোড়জান ইউপির ১নং ওয়ার্ডের সদস্য বাহারুল ইসলাম বলেছেন, লিষ্টে নাম আছে এমন বেশ কয়েকজনকে কার্ড দেয়া হয়নি। অপরিচিত লোকের নাম খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় আছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
চৌহালী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেছেন, তিনি এই কর্মস্থলে নতুন এসেছেন। সবকিছু এখনো তার পক্ষে জেনে উঠা সম্ভব হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ আহম্মেদ মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন, তিনি খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির তালিকায় কমন অনিয়মের মৌখিক অভিযোগ পেয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে তালিকা হালনাগাদ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here