চৌহালীতে প্রভাবশালীদের মাটির ব্যবসা রমরমা শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীরা চরম ভোগান্তিতে

0
357

শফিউল আযম, বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা ঃ
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের নদীর ভাঙন কবলিত এলাকায় টাঙ্গাইলের নাগরপুরের একটি প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ী চক্র স্থানীয় কিছু ব্যক্তির সহায়তায় মাটি কেটে বিক্রি করে আসছে। এতে ভাঙন তরান্তিত হচ্ছে। মাটি বহনকারী হাইড্রোলিক ট্রাক চলাচল করায় একমাত্র কাঁচা সড়কটি খানাখন্দে পরিনত হয়েছে। এদিকে কাঁচা সড়কে ট্রাক চলাচল করায় ধুলাবালিতে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করে কোন প্রতিকার মিলছে না বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বিনানই, বাঘুটিয়া ও মিটুয়ানী এই ৩টি গ্রামে অসময়ে চলছে যমুনা নদীর ভাঙন। ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতভিটা ও ফসলি জমি। নদী পাড়ের বাসিন্দারা তাদের বসতঘর সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এই সুযোগে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের একটি প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ী চক্র স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির সহায়তায় যমুনা নদী পাড়ের ভাঙন কবলিত এলাকার ফসলী জমি ও বসতভিটা থেকে হাজার হাজার ঘনফুট মাটি কেটে বিক্রি কওে আসছে। এভাবে চক্রটি প্রতিদিন মাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
জানা যায়, গত প্রায় দেড়মাস ধরে কয়েকটি স্কেভেটর মেশিনের সাহায্যে পয়লা হাই স্কুল ও মাদরাসার দক্ষিণে যমুনা নদী পাড়ের বসতভিটা ও সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। এতে যমুনার পূর্বপাড়ে ভাঙন তরান্বিত হচ্ছে। সেখান থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫০ ট্রাক মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। এদিকে মাটিবাহী ট্রাক চলাচল করায় ভুতের মোড়-ছলিমাবাদ কাঁচা সড়ক খানাখন্দে পরিনত হয়েছে। এতে প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে বসবাসরত কয়েক হাজার মানুষের ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র ধুলো পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বৃদ্ধ ও শিশুরা শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রেগে আক্রান্ত হচ্ছে।
সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল মমিন মন্ডল বাঘুটিয়া ইউনিয়নের সড়ক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শনের সময় ওই এলাকার বাসিন্দা সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুর রউফ দুলাল, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম, আওয়ালীগ নেতা জহুরুল ইসলাম ও মোশারফ মোল্লা এলাকাবাসির পক্ষ থেকে নদী পাড়ের মাটি কাটা ও সড়কের দুর্ভোগ সৃষ্টিকারীদের বিষয়ে বিস্তর অভিযোগ করেন। এমপি আবদুল মমিন মন্ডল তাৎক্ষনিক ভাবে এলাকার সড়ক ও নদী ভাঙন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রশাসন ও দলের নেতা-কর্মীদেও দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষক ও রাজনৈতিক নেতা জানিয়েছেন, টাঙ্গাইলের নাগরপুরের একটি প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ী চক্র স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির সহায়তায় এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রশাসনের লোকদের ম্যানেজ করে চৌহালীর বিনানই, বাঘুটিয়া, মিটুয়ানি গ্রামের সরিষাসহ উঠতি ফসলের ক্ষেতসহ ভিটের মাটি কেটে নিয়ে নাগরপুরের বিভিন্ন বাসা বাড়ি ও খাল ভরাটের ব্যবসা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। মাটি বহনের দ্রুত গতির ট্রাক চলাচল করায় এলাকার ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তিন সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে যতাযাতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেক সময় বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে ধুলায় পোশাক নষ্ট হয়ে যায়া। এতে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
এ ব্যাপারে স্কেভেটর মালিক ছালাম এন্টার প্রাইজের সত্ত্বাধীকারি সাজ্জাদ হোসেন পল বলেছেন, নিজস্ব জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে ব্যবসা করছি। এতে কারও কোন ক্ষতি হচ্ছে না। তবে তার ছেলে রুপম জানিয়েছেন, চৌহালী থানা পুলিশ ও স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করে ব্যবসা করা হচ্ছে। এর আগে সড়কে খানাখন্দক ছিল। কয়েকদিন আগে মাটি দিয়ে ভরাট করে গাড়ি চালাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চৌহালীর বাঘুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল কাহহার সিদ্দীকি জানিয়েছেন, মাটিকাটা ও বিক্রি বন্ধে এলাকাবাসী একাট্টা। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। চৌহালী থানার ওসি রাশেদুল ইসলাম বিশ্বাস মাটি কাটার কথা স্বীকার করে বলেছেন, এর আগে আমার অফিসার গিয়ে স্কেভেটরের চাবি নিয়ে এসেছিল, কয়েকদিন মাটি কাটা বন্ধ ছিল। তবে তিনি অনৈতিক সুবিধা গ্রহন করার কথা অস্বীকার করেছেন।
চৌহালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেওয়ান মওদুদ আহমেদ জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায় নাই। মাটি কেটে নেয়া ও সড়কের ক্ষতি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here