তাড়াশে অতি-দরিদ্রদের কর্মসংস্থান প্রকল্পের টাকা হরিলুট: অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা

0
387

লুৎফর রহমান তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা:সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের ‘অতি-দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান’ প্রকল্পে কাজ না করে টাকা হরিলুট করার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ‘অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান’ কর্মসুচির (ইজিপিপি)আওতায় ২য় পর্যায়ের ওয়েজ কষ্টের গৃহিত প্রকল্পে হাজিরায় গড়মিল দেখা দিয়েছে। কাজ না করে টাকা হাতিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের সদস্য ও চেয়ারম্যানারা শ্রমিক হাজিরা খাতায় ভূয়া হাজিরা করছেন। ফলে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যই ভেস্তে যেতে বসেছে । জানা গেছে, তাড়াশ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের আওতায় উপজেলার আট টি ইউনিয়নের ৪০টি প্রকল্পের জন্য এক কোটি ২৭লক্ষ ১২হাজার টাকায় ১৫৮৯জন উপকারভোগী শ্রমিকের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ থাকলেও প্রতিদিন বিভিন্ন প্রকল্পে কমপক্ষে ছয় শতাধিক শ্রমিক অনুপস্থিত থাকছেন। প্রতিদিন প্রতি শ্রমিকের ২শত টাকা করে মুজুরি ধরা থাকলে ৬ ’শ জনের প্রতিদিনি ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ফাঁকি দিয়ে ওই অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যান ও দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
প্রকল্প এলাকায় সরেজমিনে গত ১০ ও ১২ জুন গিয়ে দেখা গেছে, হাজিরা খাতায় শ্রমিকের গড়মিল। উপজেলার তালম ইউনিয়নের “তারাটিয়া আব্দুস সাত্তারের বাড়ি ভরাট প্রকল্পে” ৪২ জন শ্রমিকের স্থলে কাজ করছেন ২৪ জন। বারুহাস ইউনিয়নের “মনোহরপুর মোহাম্মদ মাষ্টারের বাড়ী হতে পৌওতা রাস্তা মেরামত প্রকল্পে” ৫০জন শ্রমিকের স্থলে কাজ করছেন ২৩ জন। সগুনা ইউনিয়নের “হাইস্কুল মাঠ ও মাকড়শোন আলতাবের বাড়ি হতে মসজিদ প্রকল্পে ৭৫ জন শ্রমিকের স্থলে কাজ করছেন ৩২ জন। মাগুড়া ইউনিয়নের “ঘরগ্রাম পাইকনিলি ওয়াবদা  মাটি ভরাট প্রকল্পে” ৭৫ জন শ্রমিকের স্থলে কাজ করছেন ৩৬ জন। নওঁগা ইউনিয়নের “বি-রৌহালী আয়নালের বাড়ি হতে নওঁগা রাস্তা মেরামত প্রকল্পে” ৫২ জন শ্রমিকের স্থলে কাজ করছেন ৩৫ জন। তাড়াশ সদর ইউনিয়নের “বোয়ালিয়া আজাহারের বাড়ি হতে বোয়ালিয়া দক্ষিণপাড়া দূর্গা মন্দির পর্যন্ত রাস্তা মেরামত প্রকল্পে” ৩৩ জন শ্রমিকের স্থলে কাজ করছেন ১৪ জন। মাধাইনগর ইউনিয়নের “গুয়ারাখি হান্নানের বাড়ি হতে মসজিদের রাস্তা মেরামত প্রকল্পে” ৩৫ জন শ্রমিকের স্থলে কাজ করছেন ১৬ জন। এবং দেশীগ্রাম ইউনিয়নের “দুলিশ্বর কবরস্থানে মাটি ভরাট প্রকল্পে” ৩৩ জন শ্রমিকের স্থলে কাজ করছেন ১৬ জন শ্রমিক।
এছারাও উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্পে একই পদ্ধতিতে হাজিরা খাতায় প্রকল্পে অনুপস্থিত শ্রমিকদের উপস্থিত দেখানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রকল্পের কর্মরত শ্রমিক সর্দার আমিরুল ইসলাম, সাইদার রহমান ও মুনসুর রহমান টালবাহানা করে এ প্রতিনিধিকে বলেন, সব শ্রমিক উপস্থিত আছে, কেউ গেছে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে, কেউ গেছে বাচ্চার কান্না থামাতে আবার কেউ গেছে খাইতে।
প্রকল্প সভাপতি ও ইউপি সদস্য চিত্তরঞ্জন, ইসমতআরা, ইসমাইল হোসেন, খয়বর ও লতা আক্তারসহ বিভিন্ন প্রকল্পের সভাপতি শ্রমিক হাজিরা খাতায় গড়মিলের বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এদিকে শিশু আইন অমান্য করে গুয়ারাখি প্রকল্পে নবম শ্রেণি।।র ছাত্র আব্দুল হামিদ, তৌহিদসহ বেশির ভাগ প্রকল্পে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ শিশু শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেছে। এছারাও সিংহভাগ প্রকল্পে সাইনবোর্ড টাটানো হয়নি।গড় পরতা এ চিত্র সবগুলো প্রকল্পেই বিদ্যমান ।
তাড়াশ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নুর-মামুন বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে অনুপস্থিত শ্রমিকদের মুজুরি কর্তন করা হবে।
এব্যাপারে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফ্ফাত জাহান বলেন, প্রকল্পে যারা উপস্থিত থাকবেনা এবং যাদের হাজিরা খাতায় গড়মিল পাওয়া যাবে তাদের মুজুরি দেওয়া হবেনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here