দৌলতপুরে সমকাল প্রতিনিধি আহমেদ রাজু উপর সন্ত্রাসী হামলা: ঘটনার ৪ দিন পরও গ্রেফতার হয়নি আসামী

0
447

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) সংবাদদাতা:কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে সাংবাদিক আহমেদ রাজু (৩৫) আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাত সোয়া ১১টার দিকে উপজেলার তারাগুনিয়া বাজারে দৌলতপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী, আলোচিত ফাইভ মার্ডার ও একাধিক মামলাসহ বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামী ইয়াবা ব্যবসায়ী সোহেল হত্যার উদ্দেশ্যে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সাংবাদিক রাজুর ওপর এ হামলা চালায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দৌলতপুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় জেলার সর্বস্তরের সাংবাদিকরা তিব্র নিন্দ্রা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে হামলার মুল হোতা সন্ত্রাসী সোহেলকে গ্রেফতার ও তার শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।

আহত সাংবাদিক ও সমকাল পত্রিকার দৌলতপুর প্রতিনিধি আহমেদ রাজু জানান, মঙ্গলবার (ঈদের আগের রাতে) উপজেলার তারাগুনিয়া বাজার থেকে মোটরসাইকেলে চড়ে নিজ বাড়ি ফিরছিলেন। বাজারের চার রাস্তার মোড়ে পৌছালে পূর্ব থেকে ওঁৎ থাকা সন্ত্রাসী সোহেল সহযোগীদের নিয়ে তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসী সোহেল সাংবাদিক রাজুকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার মাথা ও মুখে আঘাত সহ বেধড়ক মারপিট করতে থাকে। পরে সন্ত্রাসী সোহেল তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করলে স্থানীয়দের সহায়তায় সাংবাদিক রাজু প্রাণে বাঁচেন। পরে সন্ত্রাসী সোহেল সাংবাদিক রাজু পকেটে থাকা নগদ বিশ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে নির্বিগ্নে চলে যায়।

পরে তারাগুনিয়া বাজারে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে খবর পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন। সাংবাদিকের উপর অতর্কিত এ হামলার ঘটনায় বাজারের লোকজন হতবাক হয়ে যায়। সাংবাদিকের ওপর হামলার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় সাংবাদিকসহ এলাকাবাসী ঘনাস্থলে ছুটে যান এবং ক্ষভে ফেটে পড়েন। সেই সাথে সন্ত্রাসী সোহেলকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

আহত সাংবাদিক রাজুকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে দৌলতপুর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ওই রাতেই দৌলতপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলে সন্ত্রাসী সোহেলকে প্রধান আসামী করে মামলা হয়। যার নং ৯। মামলার পর বুধবার বেলা ১১টার দিকে দৌলতপুর থানার ওসি মো: আজম খান ও মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রাজিব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উপস্থিত স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ভেড়ামারা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহ মো: আল বেরুনী ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নিয়ে আবারও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সন্ত্রাসী সোহেলকে আইনের আওতায় নেওয়ার আশ্বাস দিলেও ঘটনার ৪দিন পরও গ্রেফতার হয়নি হামলাকারী চিহ্নিত সন্ত্রাসী সোহেল।

হামলার বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি মো: আজম খান বলেন, “আমার ওপর ভরসা রাখেন। সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনার সুষ্ঠ বিচার হবে সে যতবড়ই ক্ষমতাধর হোক না কেন”।

এদিকে বুধবার (ঈদের দিন) বিকেল ৫টায় দৌলতপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিক আহমেদ রাজুর ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দৌলতপুর প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক এমজি মাহমুদ মন্টুর সভাপতিত্বে জরুরী সভায় দৌলতপুরের সর্বস্তরের অর্ধশত সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। সভায় সাংবাদিক আহমেদ রাজুর ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারী সন্ত্রাসী সোহেলকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। সভায় শনিবারের মধ্যে সন্ত্রাসী সোহেল গ্রেফতার না হলে রোববার সকালে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে সর্বস্তরের সাংবাদিকদের মানববন্ধন কর্মসূচী ঘোষনা করা হয়। এছাড়াও সাংবাদিক আহমেদ রাজুর ওপর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও ক্ষভ জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারী শীর্ষ সন্ত্রাসী সোহেলকে গ্রেফারের দাবি জানিয়েছেন কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন।

কে এই সন্ত্রাসী সোহেল:
উপজেলার খাস মথুরাপুর ইউনিয়নের মৃত নুর মহম্মদ বিশ্বাসের ছেলে সন্ত্রাসী সোহেল রানা ওরফে সোহেল বিশ্বাস (৪০)। তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিপণের জন্য মানুষ অপহরণ, হত্যা, মাদক, ইয়াবা ব্যবসা, চোরাই মোটরসাইকেল ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ২০১২ সালে শিশুসহ ৫ জনকে অপহরনের পর হত্যার শেষে তার বাড়ির পেছনে বাঁশ বাগানে পুতে রাখার সেই সারা দেশে আলোড়িত ঘটনার অন্যতম হোতা এই সোহেল রানা। যে মামলা এখনও চলমান (যার নং সেশন-৪৩১/১২ ও ২৫৬/১২)। ওই ঘটনায় প্রায় ২ বছর পলাতক থাকার পর এলাকায় ফিরে ফের সে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। বর্তমানে তার নেতৃত্বে এলাকায় মানুষ অপহরণ, মাদক-ইয়াবা ও মোটরসাইকেল চোরের একটি শক্ত সিন্ডকেট গড়ে উঠেছে। এই চক্র পাড়ায় পাড়ায় মাদকের রমরমা কারবার গড়ে তুলেছে। সোহেলসহ এসব চক্রের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী মুখ খুলতেও ভয় পায়। তাই বেশ দাপটের সাথেই তারা তাদের মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। গত এপ্রিল মাসে সোহেলের বাড়িতে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ তার স্ত্রীকে আটক করে। এ সময় সোহেল পালিয়ে যায়। সোহেলসহ তাদের এই চক্রের অত্যাচারে সাধারন মানুষ অতিষ্ট। অবিলম্বে সোহেলসহ তার সহযোগীদের আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here