পদ্মা ও যমুনায় বিলীন হয়েছে আড়াই শতাধিক বাড়ি, ফসলী জমি ও পাকা সড়ক

0
313

পূর্ব-পশ্চিম জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালন লাইন আনকারা টাওয়ার মারাত্মক ঝুঁকিতে
শফিউল আযম, বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা ঃ
বেড়া, সুজানগর ও শাহজাদপুর উপজেলার ৩০টি গ্রামের মানুষ পদ্মা ও যমুনার ভয়াবহ ভাঙনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। যমুনা ও পদ্মা নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। গত তিন সপ্তাহের ভাঙনে ২৫০টি বসতবাড়ী, দুই শতাধিক বিঘা ফসলী জমি, এলজিইডি’র একটি পাঁকা সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পূর্ব-পশ্চিম জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালন লাইনের আনকারা টাওয়ার ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ভাঙনের হুমকীর মুখে পড়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত তিন সপ্তাহ ধরে শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি, গালা, জালালপুর, খুকনী ও সোনাতনী এই ৫টি ইউনিয়নের যমুনা নদী তীরবর্তী ১৮টি গ্রামের দুই শতাধিক বসতবাড়ী, প্রায় শতাধিক বিঘা, তিল, কাউন, পাটসহ অন্যান্য ফসলী জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত একমাত্র কমিউনিটি ক্লিনিক ভাঙনের হুমকীর মুখে পড়ায় তরিঘড়ি করে মাত্র ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এতে চরাঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
বেড়া উপজেলার রূপপুর ইউনিয়নের নটাখোলা থেকে মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত ভাঙনের তান্ডবলীলা চলছে। এর মধ্যে ঘোপসেলন্দা গ্রামের ভাঙনের তীব্রতা সবচয়ে বেশি। ইতোমধ্যে এলজিইডি’র পাঁকা সড়ক, ৩০টি বসতবাড়ী, ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঘোপসেলন্দা গ্রামের একমাত্র মসজিদটি ভাঙনের হুমকীর মুখে পড়েছে। ওই গ্রামের আব্দুর রশিদ, নূরে আলমসহ অনেকেই বলেছেন, করোনা এসেছে আবার চলেও যাবে। কিন্তু যমুনা নদীতে ঘরবাড়ী ও জমি বিলীন হয়ে গেলে ফিরে পাওয়া যাবে না। সে জন্য মানুষের আতঙ্ক করোনা নয়, যমুনা নদী ভাঙন। বেড়া পাউবো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ঘোপসেলন্দা গ্রামের প্রায় ১২০ মিটার এলাকাব্যাপী ভাঙনের প্রচন্ডতা সবচেয়ে বেশি। তারা বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছেন।
রুপপুরের খানপুরা গ্রামের বাসিন্দা জানে আলম বললেন, ভাঙনে এলজিইডি’র খানপুরা-দয়রামপুর সড়কের ২০০ মিটার যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে। একদিনের মধ্যে আমার তিনবিঘা আমন ধানের জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন নদী আমার বসত ভিটা থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দুর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনার অব্যাহত ভাঙনে খানপুরা গ্রামে পূর্ব-পশ্চিম জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালন লাইনের আনকারা টাওয়ার মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। এই আনকার টাওয়ার যমুনা নদীর ভেতর দিয়ে আসা ১১টি সঞ্চালন টাওয়ারকে নিয়ন্ত্রন করে। এই টাওয়ার থেকে যমুনা নদী মাত্র ৭০০ মিটার দুর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সারা দেশে মারাত্মক বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এ ছাড়া সুজানগড় উপজেলায় পদ্মা নদীতেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বিভাগের তথ্যানুসারে উপজেলার গুপিনপুর, বরখাপুর, রায়পুর, নুরহাটি, খলিলপুর, কাঞ্চনবাঁধ ও হাসামপুর গ্রামের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বসতবাড়ী, ফসলী জমি প্রমত্তা পদ্মায় বিলীন হচ্ছে।
উপজেলার রুপপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান উজ্জল হোসেন জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের নটাখোলা ও ঘোপসেলন্দায় যমুনার ভাঙনে অব্যাহত রয়েছে। বসতভিটা, ফসলী জমি ও গাছপালা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। ইতিমধ্যে প্রায় ২৮ থেকে ৩০টি বাড়ী, একটি মসজিদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসকল পরিবারের এখন নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। নগদ অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় ওই সকল পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সুজানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন জানিয়েছেন, গত এক মাস ধরে পদ্মা নদী যেভাবে আগ্রাসী হয়ে উঠেছে, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে অনেক পরিবার ভিটেমাটি ও ফসলী জমি হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।
বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল হামিদ বলেছেন, যমুনা ও পদ্মা নদীতে পানি বাড়ার সাখে সাথে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি ভাঙন কবলিত ৬টি পয়েন্টে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নদীভাঙন অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে এসেছে। পুরোপরি নিয়ন্ত্রনে না আসা পর্যন্ত বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here