পাবনার চরাঞ্চলে সরিষা ফুলের মধু ফুলেই শুকিয়ে যাচ্ছে

0
250

শফিউল আযম ঃ
পদ্মা-যমুনা নদীর অববাহিকার প্রকৃতি কন্যা যেন হলুদ শাড়ী পরিধান করেছে। চরের সরিষা ক্ষেতে মৌমাছির গুণ গুণ শব্দ যেন প্রকৃতি কন্যার বিয়ের সানাইয়ে সুর তুলেছে। দৃষ্টিনন্দন মনোমুগ্ধকর চোখ জুড়ানো এমন দৃশ্য দেখতে প্রকৃতিপ্রেমীরা সপরিবারে ভিড় করছেন মাঠে, অনেকেই ছবি তুলছেন। মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে দিগন্ত বিস্তৃত সরিষার ক্ষেত। পদ্মা-যমুনার চরাঞ্চলে মৌচাষিরা না আসায় সরিষা ফুলের মধু ফুলেই শুকিয়ে যাচ্ছে।
চলতি রবি মওসুমে পাবনা জেলার চরসাফুল্লা, চরপেচাকোলা, চরআড়ালিয়া, সাঁড়াশিয়া, কল্যানপর, চরসাফুল¬া, চরনাগদা, চরঢালা, চরকল্যানপুর, পূর্বশ্রীকন্ঠদিয়া, পদ্মারচর, চাঁমতারা, শিংঘুলি, ভারদিঘুলিয়া, চরবলরামপুর, চরভাড়ারা, সাদিপুর, সুদিরাজপুর, আশুতোষপুরসহ ছোট বড় ৩০টি চরে সরিষার সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। চরের মাঠের পর মাঠ জুড়ে এখন দৃষ্টিনন্দন মনোমুগ্ধকর থোকা থোকা হলুদ ফুলের চাদর বিছানো। সেই হলুদ ছুঁয়েছে দিগন্তরেখায়। এদিকে পদ্মা-যমুনার দূর্গম চরাঞ্চলে মৌচাষিরা না আসায় সরিষা ফুলের মধু ফুলেই শুকিয়ে যাচ্ছে।
মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা চরাঞ্চল। ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি উড়ে গিয়ে এক ফুল থেকে আরেক ফুলে গিয়ে বসছে। মৌমাছির বিচরণে সঠিকভাবে সরিষার ফুলে পরাগায়ন ঘটছে। তাতে সরিষার উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে যায় অনেক। এতে লাভবান হন কৃষকরা। শুধু তাই নয় পরিবেশবিদরা বলছেন, ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার কম হওয়ায় উপকৃত হচ্ছে পরিবেশ। মৌমাছি শুধু মধুই সংগ্রহ করে না, ফসলের জন্য ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ মেরে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের সহায়তা করে থাকে।
খুলনার মৌ চাষি জসিম সরদার জানান, পাবনা অঞ্চলে যে পরিমান সরিষার চাষ হয়েছে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মৌচাষি থাকলে প্রায় ছয় কোটি টাকার মধূ সংগ্রহ করা সম্ভব। তার দু’টি গ্রæপে ৩৪০টি মৌমাছির বাক্স আছে। প্রতিটি বাক্সে একটি করে রানী মৌমাছি রয়েছে। রানীর নির্দেশ মতো শ্রমিক মৌমাছিরা তিন কিলোমিটারের মধ্যে মধু সংগ্রহ করে। শ্রমিক মৌমাছি রানীর নির্দেশে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মধু সংগ্রহ করে। তিনি বলেন, ৩৪০টি মৌ বাক্সে এক মাসে ১৫৪ মন মধু সংগ্রহ করা যাবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৬ লাখ টাকা। পাবনা জেলার সমতল এলাকায় শতাধিক মৌ চাষির দল মধু সংগ্রহ করেছে। শুধু মাত্র দূর্গম এলাকা হওয়ায় কারণে মৌ চাষির পদ্মা যমুনার চরে থেকে মধু সংগ্রহ করে না। এতে চরসাফুল্লা, চরপেচাকোলা, চরআড়ালিয়া, সাঁড়াশিয়া, কল্যানপর, চরসাফুল¬া, চরনাগদা, চরঢালা, চরকল্যানপুর, পূর্বশ্রীকন্ঠদিয়া, পদ্মারচর, চাঁমতারা, শিংঘুলি, ভারদিঘুলিয়া, চরবলরামপুর, চরভাড়ারা, সাদিপুর, সুদিরাজপুর, আশুতোষপুরসহ ছোট বড় ৩০টি চরের প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির সরিষা ফুলের মধু ফুলেই শুকিয়ে যাচ্ছে।
সাঁথিয়া উপজেলার বিলসলঙ্গী মাঠে সরিষাক্ষেতে মধু সংগ্রহে সরঞ্জাম নিয়ে বসেছেন বগুড়ার আলেক আলী ও নাটোরের সানাউল হক। তারা জানান, মধু সংগ্রহ করে তাদের স্বাবলম্বী হওয়ার কাহিনী। তাদের বাক্্েরর সংখা ৩৫২টি। প্রতি মন মধু ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেন ঢাকার নবাবপুর ও যাত্রাবাড়ীতে। তারা বলেন, উন্নত প্রশিক্ষন আর সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মধু সংগ্রহের কাজে উন্নতি করা যাবে। দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে রফতানি করে বিপুল বৈদেশির মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সূত্র মতে, গত বছর জেলায় ৩২ হাজার ৯৪২ জেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছিল। গত মওসুমে সষিার ভালো দাম পাওয়ায় চলতি মওসুমে চাষিরা সরিষা চাষে ঝুকে পড়ে।জেলা সদর, বেড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর, ঈশ্বরদী, আটঘড়িা, চাটমোহর, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া উপজেলায় সরিষা আবাদ বেড়ে দাড়িয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টরে। আর এক মাসের মধ্যেই ক্ষেত থেকে সরিষা তোলা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করবেন চাষিরা।
বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ মসকর আলী জানান, উন্নত জাতের বীজ, সারের সরবরাহ নিশ্চিত করতে কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে ছিল। পদ্মা ও যমুনার চরের মাটি বেলে, দো-আঁশ হওয়ায় পানি ধারণের ক্ষমতা কম। মাটির পানি ধারণক্ষমতা কম হলে জৈব সারের প্রয়োজন হয়। সরিষা চাষ করলে খাবার তেলের চাহিদা পূরণসহ পাতা ও ফুল ঝড়ে পড়ে জৈবসার তৈরি করে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here