পাবনার নদীতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খাঁচায় মাছ চাষ অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হচ্ছেন অনেক যুবক

0
399

শফিউল আযম,বেড়া:ভাসমান পদ্ধতিতে মাছ চাষে স্বনির্ভরতার অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করেছেন পাবনা জেলার হুড়াসাগর, বড়াল ও গুমানী নদী পাড়ের অনেক বেকার যুবক। ভাসমান মৎস্য খামারে কম খরচে মাছ চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হওয়ায় এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি এলাকায় মাছের চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন তারা।

ভাসমান মৎস্য খামারে মাছ চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের মোঃ আব্দুল মুন্নাফ নামের এক খামারী। সে প্রায় ছয় বছর আগে বেড়ার হুড়াসাগর নদীতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করে। এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে বর্তমানে আব্দুল মুন্নাফ আর্থিকভাবে যথেষ্ট স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিনি জানান, ভাসমান এই মৎস্য চাষ পদ্ধতিতে রুই, চিংড়ি ও মনোসেক্্র জাতের তেলাপিয়া এই তিন ধরনের মাছ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যায়। জাল, বাঁশ, জিআই পাইপ ও প্লাস্টিকের বড় বড় ড্রাম দিয়ে এই মাছ চাষের খাঁচা তৈরি করা হয়।

এক একটি খাঁচার দৈর্ঘ্য ২০ ফুট ও প্রস্ত ১০ ফুট। প্রতিটি খাঁচা তৈরি করতে ব্যয় হয় ২০ হাজার টাকা। একটি খাঁচায় এক হাজার ১০০টি মাছ অনায়াসে চাষ করা হয়। ভাসমান এই মাছ চাষে ৬ মাস সময় লাগে। ছয় মাস পর্যন্ত মাছের খাদ্যে ব্যয় হয় ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা। এতে করে একটি খাঁচার মাছ কমপক্ষে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। খরচ বাদে প্রতি খাঁচায় আয় হয় ৩৩ থেকে ৩৬ হাজার টাকা।

ভাসমান পদ্ধতিতে মাছ চাষে মোঃ আব্দুল মুন্নাফ সাফল্য দেখে ভাঙ্গুড়া উপজেলার নাজিমুদ্দিন এবং আব্দুর রাজ্জাকসহ অনেকেই এখন এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে সাধারন মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। শুধু বেড়া ও ভাঙ্গুড়া উপজেলাই নয়, ভাসমান পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন ফরিদপুর উপজেলার পুঙ্গলী ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের হাফিজুর রহমান। হাফিজুর রহমান জানান, ২০ ফুট দৈর্ঘ, ১০ ফুট প্রস্ত ৬ ফুট গভীর ভাসমান মৎস্য খাচায় এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ মনোসেক্্র জাতের তেলাপিয়া মাছের পোনা চাষ করেন। প্রতি ছয় মাস পর পর স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয় এসব মাছ। প্রতি কেজি মাছ উৎপাদনে খরচ হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকা। চাঁদপুর জেলার ডাকাতিয়া নদী এবং বেড়া হুড়াসাগর নদীতে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ দেখে অনুপ্রানিত হয়ে নিজ এলাকার বড়াল নদীতে ভাসমান মৎস্য খামারে মাছ চাষ শুরু করেন। এখন অর্থনৈতিকভাবে অনেকটাই স্বচ্ছল হয়েছেন। এলাকার মৎস্যজীবীরা জানান, তাদেরকে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দিলে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে সুফল পাওয়া যাবে।

পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুর রউফ জানান, জেলার বেড়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়াসহ বিভিন্ন উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বড়াল, গুমানী, ইছামতি, হুড়াসাগরে ভাসমান মৎস্য খামারে মাছ চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছে স্থানীয় অনেক বেকার যুবক। বিষয়টি ব্যাপক প্রচার ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ সহযোগিতায় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here