পাবনার ফরিদপুরে এলজিইডি’র সড়ক ৬ মাসেই ধসে গেছে

0
406

শফিউল আযম, বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা:পাবনার ফরিদপুর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধিনে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ানে আরটিআইটি-২ প্রকল্পেলর আওতায় প্রায় ১২ কোটি ৩৬ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক ছয় মাস না যেতেই ধসে গেছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদর এবং প্রকৌশলীদের যোগসাজসে যেনতেন ভাবে লোক দেখানো নামমাত্র কাজ করায় কার্পেটিং উঠে যাওয়াসহ সড়ক ধসে গেছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে।

জানা যায়, ফরিদপুর উপজেলা এলজিইডি’র অধিনে প্রায় ১২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মিত পারফরিদপুর থেকে বিএলবাড়ী পর্যন্ত ৬ হাজার ৩৯০ মিটার সড়ক চলতি বছরের বছরের জুন মাসে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এদিকে খুলে দেয়ার ছয় মাস না যেতেই সড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশের কার্পেটিং উঠে যাওয়াসহ বেশিরভাগ জায়গা ধসে গেছে। কার্পেটিংয়ে নিন্মমানের বিটুমিন ব্যবহার ও মাটি সঠিকভাবে কম্প্যাকশন না করায় সরকের এই বেহাল দশা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ওই সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। তবে ঝুঁকি নিয়ে বোরাক, অটোরিকশাসহ দুই চাকার কিছু যানবাহন চলাচল করছে। এছাড়া সড়কের আরো কিছু অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। দ্রুত সংস্কার না করা হলে সড়কের এসব অংশ যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এদিকে ফরিদপুর উপজেলা এলজিইডি অফিস একটি সূত্র (এলজিইডি) জানিয়েছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব অর্থায়নে জরুরী ভিত্তিতে সড়কটি মেরামত করার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগে জানা যায়, ফরিদপুর উপজেলা স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে পারফরিদপুর থেকে বিএলবাড়ী পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। এই সড়ক নির্মাণ কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। কাজটির কার্যাদেশ পায় রাজশাহীর ঠিকাদার আব্দুল আওয়াল। ২০১৬ সালের শেষের দিকে সড়কের কাজ শুরু হয়। কিন্তু ঠিকাদার আব্দুল আওয়াল নিজে কাজ না করে পাবনার ঠিকাদার শাহনেওয়াজ আলীর কাছে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এদিকে ২০১৮ সালের শুরুর দিকে ঠিকাদার শাহনেওয়াজ ৫০ শতাংশ বিল তুলে নিয়ে সড়ক নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকার পর উপজেলা প্রকৌশল অফিস থেকে ঠিকাদার আব্দুল আওয়ালকে কাজ শেষ করার জন্য তাগিদ দেয় হয়। পরে আব্দুল আওয়াল নিজেই সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু করেই ঠিকাদার প্রাক্কলিত ব্যয় বাড়ানোর আবেদন করেন।

এই আবেদনের প্রেক্ষিতে এলজিইডি’র জেলা ও উপজেলা অফিসের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা মোটা অংকের টাকা উৎকোচের বিনিময়ে সড়ক নির্মাণে বরাদ্দকৃত ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকার প্রাক্কলন রিভাইজ করে নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে ১২ কোটি ৩৬ হাজার ১৬৫ টাকা নির্ধারণ করেন। চলতি বছরের জুন মাসে সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নির্মাণ কাজ চলাকালীন সময়ে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরে বসে যায়। সেসময় ঠিকাদার তরিঘরি করে বসে যাওয়া স্থানগুলো দায়সারাভাবে মেরামত করেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।।

গত শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার সড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক দেওভোগ গ্রামের খালের এক পাশ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। সড়ক নির্মাণে খালের পাশের অংশ বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। তবে বালুর ওপর সামান্য কিছু মাটির আস্তরণ দেয়া হয়। সড়কের ধসে পড়া ঠেকাতে খালের নিচে থেকে কার্পেটিং পর্যন্ত সিসি ব্লক বিছানো হয়েছে। সঠিকভাবে সিসি ব্লক পিসিং ও জোড়া দেয়া হয়নি। ফলে সিসি ব্লকের জোড়ার স্থান দিয়ে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে ভেতরের বালু ধুয়ে যাওয়ায় সড়ক ধসে গেছে। এছাড়া সিসি ব্লকের মূল ভিত্তিতে খালের মধ্য গাইডওয়াল নির্মাণের কথা থাকলেও পানি বাড়ার কারণে অনেক স্থানেই গাইডওয়াল নির্মাণ করা হয়নি। আর কিছু জায়গায় গাইডওয়াল নির্মাণ করা হলেও ভিত্তি মজবুত না হওয়ায় হেলে পড়েছিল। এতে গাইডওয়াল ও সিসি ব্লকসহ সড়ক ধসে গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণ কাজে অনিয়মের কারণেই সড়কের ধসে নেমেছে।

দেওভোগ গ্রামের স্কুল শিক্ষক নুরুজ্জামান বলেন, সড়ক নির্মাণ কাজের শুরু থেকেই অনিয়ম লক্ষ করা যায়। নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে এলে প্রকৌশল অফিসের কর্মকর্তাদের অনিয়মের বিষয়ে জানানো হয়। কিন্তু কাজের মানের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফলে ছয় মাস না যেতেই সড়কের বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে গেছে। বিএলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক নির্মাণের ছয় মাস না হতেই ধসে পড়ায় আমরা হতাশ হয়েছি। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। দেখি উনারা কি করেন।

ফরিদপুর এলজিইডি অফিসের সড়ক নির্মাণ তদারকির দায়িত্বে নিয়েজিত উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইসলাম আলী বলেন, সড়ক নির্মাণ কাজের মান খুব ভাল ছিল। কিন্তু এবছর আগাম বন্যার পানি চলে আসার কারণে শেষ মুহূর্তে কিছু কাজ তড়িঘড়ি করে করা হয়। এ কারণে সড়ক ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে কোন সমস্যা হবে না, ঠিকাদারের সিকিউরিটি টাকা অফিসে কাছে জমা আছে। ঠিকাদারের নিজ দায়িত্বেই সড়ক মেরামত করে দিতে হবে।

এলজিইডি’র ফরিদপুর উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ বাকী বিল্লা’র সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ানে আরটিআইটি-২ প্রকল্পেলর আওতায় প্রায় ১২ কোটি ৩৬ হাজার টাকা ব্যয়ে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সড়কের দু’পাশে খাল এবং পুকুর রয়েছে। খাল এবং পুকুরে প্রায় ৩০-৪০ ফুট পর্যন্ত গভীরতায় লোলা মাটি রয়েছে। গাইডওয়ালের জন্য যে ডিজাইন করা হয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক তা অনুমোদন করেনি। ফলে আগের ডিজাইনে খাল এবং পুকুরে গাইডওয়াল নির্মাণ করায় ঝর্ণা ও বৃষ্টির পানি সিপেস হয়ে সোল্ডারসহ সড়কের মাঝ থেকে ধসে গেছে। ঠিকাদারকে নিজ খরচে সড়ক মেরামতের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here