শফিউল আযম ঃ
পাবনার বেড়া উপজেলার বরশিলা গ্রামের চাষি কোবাদ প্রামানিক এক একর জমিতে গম আবাদ করেছিলেন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ বছর গমের ভাল ফলন পেয়েছেন। বাজারে গমের দাম চড়া থাকায় সে খুব খুশি। এক একর জমিতে গম আবাদ করতে তার খরচ হয়েছিল সবমিলিয়ে ১০ হাজার টাকা। এক একরে গম উৎপাদন হয়েছে ৩২ মন। বর্তমানে বাজারে প্রতি মন গম বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে। সেই হিসাবে খরচ বাদ দিয়ে তার প্রকৃত লাভ হবে ১৮ হাজার টাকা। তাই বেজায় খুশি সেলিম হোসেন। ফলন ও দাম ভাল পাওয়ায় তার মতো পাবনার হাজার হাজার গম চাষি বেজায় খুশি হয়েছেন।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারন অফিসের তথ্য মতে, পাবনা জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে বেশি গমে আবাদ হয়েছে। জেলায় এবার গমের আবাদ হয়েছে ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল প্রতি হেক্টরে তিন দশমিক দুই মেট্রিক টন। সেই হিসাবে মোট গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এক লাখ ৩১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার জেলায় গমের আশাতীত ফলন হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গড়ে তিন দশমিক ছয় টন হিসেবে গম উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ৪৭ হাজার ৬০০ টন। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ হাজার ৪০০ টন বেশি।
বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার দে বলেন, গম থেকে তৈরী ময়দা, সুজি ও আটার ব্যবহার বহুগুন বেড়ে যাওয়ায় গমের বাজার মুল্য উর্দ্ধমূখী, যার ফলে কৃষক গম চাষে উৎসাহী হচ্ছেন। বাংলাদেশে গমের কয়েক ধরনের জাতের মধ্যে বারি গম ২৮, বারি গম ২৯ ও বারি গম ৩০ এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী ও উচ্চ ফলনশীল, প্রতিকুল আবহাওয়ায় সহনশীল হওয়ায় এই জাতের গম বেশি চাষ হয়েছিল।
কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তথ্য মতে, এ বছর পাবনা জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাঁচ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে গমের আবাদ হয়েছিল এবং ফলন হয়েছে বেশ ভাল। প্রতি হেক্টরে গমের ফলন হয়েছে প্রায় তিন দশমিক ছয় মেট্রিক টন। ইতিমধ্যে এ অঞ্চলের গম কাঁটা ও মাড়াই শেষ হয়েছে।
পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলা সরেজমিন ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আরাম্ভ করে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত গম জমিতে লাগানো হয়। ১১০ দিনের এই ফসল ফেব্রুয়ারির শেষ সময় থেকে কৃষক ঘরে তুলতে পারেন। এক একর জমিতে গম আবাদ করতে বীজ, সেচ, নিড়ানি, কাটা-মাড়াই করে ঘরে তোলা বাবদ খরচ পরে নয় থেকে ১০ হাজার টাকা। যারা জমি বন্ধুক বা লীজ নিয়ে গম আবাদ করেছিলেন তাদের পাঁচ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে।
বেড়া কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মতিন জানান, গমের দাম বেশি থাকায় অনেক আলু চাষি এবার আলু, পেঁয়াজ ও রসুনের পরিবর্তে গমের আবাদ করেছিলেন। কারন পর পর তিন মওসুমে এ আঞ্চলের আলু, পেঁয়াজ ও রসুন চাষিদের বিপুল পরিমান টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। তাই অনেকেই আলু, পেঁয়াজ ও রসুন পরিবর্তে গমের আবাদ করেছিলেন।
এদিকে পাবনার বিভিন্ন হাট বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিমন গম বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। প্রতিমন আটা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা। আটা ও গম ব্যবসায়ীরা জানান, গমের এ দাম থাকবে না, বেড়ে যাবে। তবে সাধারন ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা একটি সিন্ডিকেট ধানের মতো গমের মজুদ গড়ে তুলতে তৎপর হয়ে উঠেছে। এই সিন্ডিকেটের হাতে গম চলে গেলে তারা চালের মতো গমের বাজার নিয়ন্ত্রন করবে। এতে সাধারন কৃষকরা যেমন ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবেন, তেমনি সাধারন মানুষ আটা ও গম বেশি দামে কিনতে বাধ্য হবে। কৃষক ও সাধারন ব্যবসায়ীরা এখন থেকেই গমে বাজার নিয়ন্ত্রনে সরকারের নজরদারি আশা করছেন।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ আজাহার আলী বলেন, বোরো ধান, পেঁয়াজ ও রসুনের আবাদে খরচ ও পরিশ্রম অনেক বেশি। উৎপাদিত ধান, পেঁয়াজ ও রসুন বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠছে না। তাই অনেক চাষি গমের আবাদ করেছিলেন। এছাড়া আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার জেলায় গমের আশাতীত ফলন হয়েছে।