পাবনা-সিরাজগঞ্জের পুশুরহাটে প্রচুর দেশি গরুর আমদানি

0
461

শফিউল আযম, বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা:
পাবনা-সিরাজগঞ্জের পশুরহাটগুলোতে প্রচুর দেশি গরু আমদানি হচ্ছে। হাটগুলোতে বিদেশি গরুর আমদানি নেই। এতে দেশি গরুর দাম ও চাহিদা দুটোই বেড়েছে। ফলে গোখামারী ও চাষিদের মুখে হাঁসি ফুটেছে। এবার কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি করে তারা গত তিন বছরের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে অনেকেই আশা প্রকাশ করেছেন।

গবাদিপশু বিশেষ করে গরু ব্যবসার সাথে জড়িত কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, বেড়ার সিঅ্যান্ডবি চতুরহাট, সাঁথিয়ার ধুলাউড়িহাট, আতাইকুলার পুস্পপাড়াহাট, দাসুড়িয়াহাট, চাটমোহরের অমৃতকুন্ডা, শাহজাদপুরের তালগাছি, উল্লাপাড়ার গোয়ালিয়াহাট, গ্যাসেরহাট, তারাশ চলনবিল এলাকার নওগাঁহাট, চৌহালীর এনায়েতপুরহাট ও বেলকুচির সমেশপুর পশুরহাটে দেশি জাতের প্রচুর গরু আমদানী হচ্ছে। তবে পশুরহাটগুলোতে ভারত, নেপাল ও ভুটানের গরু-মহিষের আমদানি নেই বললেই চলে। বিদেশি গরু আমদানি না হওয়ার সুয়োগ নিয়ে অতিমুনাফালোভী কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও ব্যাপারিরা স্থানীয় পশুরহাটগুলো থেকে গরু কিনে ক্রিত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে গরুর দাম বাড়িয়ে দিতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এ অঞ্চলের গোখামারী ও পালনকারীরা এবার কোরবানীর ঈদে দেশের বিভিন্ন জেলার পশুরহাটে প্রায় সাড়ে তিন লাখ গরু-মহিষ সরবরাহ করছে। গরুর ব্যাপারিরা খামারী ও চাষিদের বাড়ী থেকে গরু কিনছেন। হাটে দেশি গরুর প্রচুর আমদানী হচ্ছে। ফলে দেশি গরুর চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে দাম বেড়েছে। দাম বেশি হওয়ায় মাঝারি সাইজের গরু কেনার প্রতি ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি। দেশি ক্রস পাবনা ব্রিডসহ বিদেশি হাইব্রিড জাতের গরু প্রচুর আমদানি হচ্ছে। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে খুব কম। এই জাতের প্রতিটি গরুর দাম এক লাখ থেকে তিন লাখ টাকা। তবে ঢাকা, চিটাগাং ও সিলেটের ব্যবসায়ীরা দেশি হাইব্রিড ক্রস জাতে গরু বেশি কিনছে বলে ব্যাপারি ও খামারীরা জানিয়েছেন।

নগরবাড়ী-বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কের বেড়া সিঅ্যান্ডবি বাসষ্ট্যান্ডের পাশে ইছামতি নদী পাড়ে সিঅ্যান্ডবি চতুরহাটের পশ্চিম পাশে গড়ে উঠেছে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রধান পশুরহাট। সড়ক ও নৌ-পথে যোগাযোগের সুন্দর ব্যাবস্থা থাকার কারণে দেশের গরু ব্যাবসায়ীদের কাছে হাটটির গুরুত্ব অনেক বেশি। শুধু এলাকার গরু ব্যবসায়ীরাই নয়, দেশের বগুড়া, টাংগাইল, ঢাকা, সিলেট ও চিটাগাংসহ বিভিন্ন জেলার ব্যাপারিরা এই হাটে গরু কিনতে আসেন। প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার এখানে পশুরহাট বসে। তবে গত মঙ্গলবার থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত প্রতি দিনই পশুর হাট বসবে বলে হাট কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন।

গতকাল (৬ আগষ্ট) মঙ্গলবার সকালে বেড়া সিঅ্যান্ডবি চতুরহাট সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পশুরহাটে তিল ধারনের ঠাঁই নেই। দুর-দুরান্ত থেকে গরু ব্যবসায়ী ও খামারীরা শত শত ট্রাক, নসিমন, করিমন ও নৌকায় করে হাজার হাজার গরু নিয়ে আসছেন। হাটের মধ্যে জায়গা না হওয়ায় প্রাণ ডেয়ারি ফার্ম চত্বরসহ বাঁধের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাব্যাপী পশুর হাট বসেছে। ছোট, বড় ও মাঝারি সব ধরনের গরু আমদানী হয়েছে। হাটে ভারত, নেপাল ও ভুটানের গরু-মহিষের আমদানি নেই। ফলে দেশি গরুর চাহিদা বেড়েছে। দাম বেশি হওয়ায় দেশি ছোট ও মাঝাড়ি গরুর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। গত তিন বছর লোকসানের পর এ বছর গরুর ভাল দাম পেয়ে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের খামারী ও চাষিরা খুশি হয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বেনটিয়া গ্রামের গরু ব্যাবসায়ী রজব আলী, পাবনার বেড়ার উপজেলার হাতিগাড়া গ্রামের আলতাব হোসেন জানান, ঢাকার গাবতলী হাটসহ অন্যান্য পশুর হাটে প্রচুর গরু আমদানী হচ্ছে। বেচা-কেনা বেশ জমে উঠেছে। তারা এ বছর খামারীদের কাছ থেকে হাইব্রিড জাতের শতাধিক বড় গরু কিনে ঢাকার গাবতলীসহ অন্যান্য পশুর হাটে পাঠিয়েছেন। ্এদিকে বিদেশি গরুর আমদানি না হওয়ায় পশুরহাটগুলোতে দেশি গরুর দাম ও চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। বেচাÑকেনার অবস্থা এ রকম চলতে থাকলে এ বছর ব্যাপারি ও খামারীদের আশাতীত লাভ হবে। তারা আরো গরু কেনার জন্য খামারী ও চাষিদের বাড়ী বাড়ী যাচ্ছেন। কিন্তু চাহিদা মতো গরু পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছে।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার তালগাছি গ্রামের খামারী জেড আলম জানান, বেড়া সিঅ্যান্ডবি চতুরহাটে তার অস্টেলিয়ান জাতের গরু এক লাখ ৭৬ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। শহিদ নগরের আবুল কালাম জানান, তিনি হাটে গরু এনে বিপাকে পরেছেন। হাটে এত গরু আমদানী হয়েছে যে তিল ধারনের ঠাঁই নেই। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর গরু দাম ও ক্রেতার সমাগম অনেক বেশি। তার দেশি জাতের গরু ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। সাঁথিয়া উপজেলার ভিটাপাড়া গ্রামের লোকমান হোসেন জানান, গত বছর ভারত, ভুটান ও নেপালের গরু-মহিষ বেশি আমদানি হওয়ায় দেশি গরু বেচা-কেনা অনেক কম হয়েছে। তাই খামারীরা গত বছরের অবিক্রিত গরু এবার ঈদ উপলক্ষে হাটে বিক্রি করতে এনে ভাল দাম পাচ্ছেন। এতে তাদের লোকসান কাটিয়ে কিছুটা লাভ হবে।

সিরাজগঞ্জের ওমরপুরচরের গরু ব্যবসায়ী আব্দুল করিম জানান, তিনি সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে মাত্র ২টি ভারতীয় গরু নিয়ে এসেছেন। বেড়া সিঅ্যান্ডবি চতুরহাটে শাহজাদপুর উপজেলার চরাচিথুলিয়া গ্রামের খামার মালিক আতাউর রহমান জানান, তিনি এ বছর ৩৫টি গরু প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মোটাতাজা করেছেন। গত তিন বছর আশানুরুপ দাম না পাওয়ায় হতাশ ছিলেন। এবার গরুর ভাল দাম পাওয়ার আশা করছেন। তবে গোখাদ্য, চিকিৎসা খরচ ও ওষুধের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে খরচ অত্যাধিক বেড়ে গেছে। যদি গরু ব্যবসায়ী ও ব্যাপারিরা ক্রিত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি না করে, তবে দেশি গরুতেই কোরবানির চাহিদা পূরণ হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

এদিকে পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের পশুরহাটগুলোর ইজারাদারের প্রতিনিধিদের কাছে গবাদিপশুর ক্রেতা ও বিক্রেতারা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। তারা অনেকেই জানান, হাট ইজারাদারের প্রতিনিধিরা গরু প্রতি ৫০০ টাকার কাছে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত খাজনা আদায় করছেন। নিয়ম অনুয়ায়ী হাটে টোল আদায়ের চার্ট টানানো হয়নি। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতাকে রশিদ দেয়া হচ্ছে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here