পাবনা-সিরাজগঞ্জে কোরবানির ঈদ সামনে ভেজাল গোখাদ্য ও ওষুধের রমরমা ব্যবসা

0
405

শফিউল আযম, বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা:কোরবারিন ঈদ সামনে গবাদিপশু সমৃদ্ধ পাবনা-সিরাগঞ্জ অঞ্চলে গো-খাদ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বণ্যার কারণে গোচারণ ভূমি ডুবে যাওয়ায় এই সঙ্কট আরো প্রকট আকার ধারন করেছে। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গো-খাদ্যে ভেজাল মেশাচ্ছে। তারা গো-খদ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি ওজনে কম দিচ্ছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তিল, তিশি, সরিষার খৈল ও লালির দাম। এ ছাড়া গবাদিপশুর নকল ওষুধ তৈরি করে একটি চক্র বাজারে ছাড়ছে। এই ভেজাল গো-খাদ্য ও ওষুধ কিনে খামারিরা প্রতারিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

খামারিরা জানান, কোরবানি ঈদের সামনে প্রতি বছরই গো-খাদ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। তবে এ বছর বণ্যার কারণে এমনিতে গো-খাদ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এরপর কোরবানির ঈদ সামনে গোখাদ্যের চাহিদা বেড়ে পাওয়ায় দামও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত তিন মাসের ব্যবধানে ৪০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা মসুর ভুসি ৮৫০ টাকা থেকে বেড়ে এক হাজার ৫০ টাকা, ৩৭ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা গমের ভুসি এক হাজার ১১০ টাকা থেকে বেড়ে এক হাজার ৩৫০ টাকা, ১৫ কেজির প্রতি বস্তা এ্যাংকার ভুসি ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৫৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খড়ের বাজার দর স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। শুধু ভুসি নয়, পল্লা দিয়ে বেড়েছে তিল, তিশি, সরিষার খৈল ও লালির দাম।

কোম্পানির নির্দ্ধারিত ওজন অনুয়ায়ি প্রতি বস্তায় ৩৭ কেজি করে ভুসি থাকার কথা। অথচ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্রতি বস্তায় দুই থেকে তিন কেজি করে ভুসি ওজনে কম দিচ্ছে। এসব ব্যবসায়ীর দোকানে সেলাই মেশিন রয়েছে। তাঁরা ৩৭ কেজি ওজনের প্লাস্টিকের বস্তা খুলে দুই থেকে চার কেজি ভুসি বের করে নিচ্ছে। পরে ওই বস্তা রিপ্যাকিং করে দেয়া হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ব্যবসায়ী ওজন সঠিক রাখার জন্য বের করে নেয়া ভুসির সমপরিমান কাঠের গুঁড়ো, তুষ, পচা আটাসহ বিভিন্ন ধরনের ভেজাল মিশিয়ে দিচ্ছে। খামারিরা বস্তাগুলোতে নিখুঁত সেলাই ও লেবেল দেখে ভালোমানের ভুসি মনে করে কিনে নিচ্ছেন। এভাবে খামারি ও চাষিদের প্রতারিত করা হচ্ছে বলে অভিয়োগ উঠেছে।

এদিকে গরুর প্রধান খাদ্য খড় কিনতে গিয়েও খামারিরা প্রতারিত হচ্ছেন। খর বিক্রেতারা প্রতিমণ খড়ে দুই থেকে তিন কেজি করে ওজন কম দেয়া হয় বলে খামারিরা অভিযোগ করেছেন। সরেজমিনে বেড়ার কয়েকটি খড় বিক্রির স্থান ঘুরে দেখা যায়, সেখানে খড় ওজন করার দাঁড়িপাল্লা নেই। অনুমানের ভিত্তিতে বিক্রেতারা খড়ের বোঝা তৈরি করে তা খামারিদের কাছে মণ হিসেবে বিক্রি করছে। বণ্যায় গোচারণ ভূমি ও ঘাসের ক্ষেত ডুবে যাওয়ায় কাঁচা ঘাসের সঙ্কট ও দাম খামারীদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।

বেড়া বাজারের খড় বিক্রেতা আব্দুল হক জানান, একসময় বিশেষ ধরণের দাঁড়ি-পাল্লার মাধ্যমে ওজন করে খর বিক্রি করা হলেও এখন অনুমানের ভিত্তিতেই তা বিক্রি করা হয়। এতে দুই-এক কেজি ওজনে কম বেশি হতে পারো বলে তিনি দাবি করেছেন। বৃশালিখা মহল্লার খামারি মোমিন মোল্লা বলেন, ‘বাজার থেকে পাঁচ মণ খড় কিনে এনে ওজন দিয়ে দেখি প্রায় এক মণ কম। আর বাজারে এখন ভালো ভুসি পাওয়াই মুশকিল। ভেজাল ভুসি খেয়ে গরু অসুস্থ হয়ে পড়ছে, গাভীর দুধ কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা (খামারিরা) চরম বিপাকে পড়েছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবনার সাঁথিয়া, বেড়া, সুজানগর, চাটমোহর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, উল্লাপাড়াসহ কয়েকটি উপজেলায় ভেজাল গোখাদ্যের বিরুদ্ধে অনেক আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে ভেজাল মেশানো বন্ধ হয়নি। প্রায় এক বছর ধরে উপজেলাগুলোয় ভেজাল গো-খাদ্য ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো অভিযান পরিচালিত হচ্ছে না। এই সুযোগে ভেজাল কারবারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে প্রতারিত হচ্ছে গোখামারি ও চাষিরা।

এদিকে শুধু গোখাদ্যেই নয়, গবাদিপশুর চিকিৎসায় (ভেটেরিনারি) ব্যবহৃত ওষুধ নকল করা হচ্ছে। পাবনা ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার গোপন কারাখানা বসিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি চালু কোম্পানির নকল ভেটেরিনারি ওষুধ তৈরি করে গ্রামাঞ্চলের ওষুধের দোকানে দোকানে সরবরাহ করে আসছে। এসব নকল ওষুধ কিনে খামারি ও চাষিরা প্রতারিত হচ্ছেন অভিযোগ উঠেছে।
গত ২৪ জানুয়ারি আমিনপুর থানা পুলিশ কাশিনাথপুর এলাকায় এমনই একটি নকল ওষুধ তৈরির কারখানার সন্ধান পায়। ওই কারখানা থেকে বিপুল পরিমান নকল ওষুধ ও ওষুধ তৈরির উপকরণসহ কোটি টাকার মেশিন জব্দ করে। এসময় এক ব্যক্তিকে আটক করে। পরে ভ্রাম্যমান আদালত এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করে। বেশি লাভের আশায় পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের কিছু ওষুধের দোকান মালিক-কর্মচারি নকল ওষুধ উৎপাদনকারীদের সাথে আঁতাত করে দোকানে ক্ষতিকর নকল ওষুধ রেখে কাছে বিক্রি করে আসছে বলে খামারিরা অভিযোগ তুলেছেন।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোঁতাজিয়া গ্রামের খামারি বাহাউদ্দিন জানিয়েছেন, তিনি ‘কয়েকদিন আগে কাশীনাথপুর বাজারের একটি ওষুধের দোকান থেকে দুই বোতল ভিটামিন কিনেছিলেন। ওই ভিটামিন খাওয়ানোর উপকার পাওয়া তো দুরের কথা, গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। পরে পরীক্ষা করে দেখা যায় দুই বোতল ভিটামিনই নকল।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিফ আনাম সিদ্দিকী জানান, ভেজাল গোখাদ্য ও নকল ওষুধের ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে খোঁজ নিতে বলেছেন। এ ব্যাপারে প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here