পুরোনো ও নিন্মমানের এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার

0
456

শফিউল আযম বেড়া সংবাদদাতা:এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরনে প্রতি বছর প্রাণহানিসহ মূল্যবান সম্পদ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। দূর্ঘটনার কারন হচ্ছে, পুরোনো ও নিন্মমানের সিলিন্ডার। সিলিন্ডারগুলোর ব্যবহারকাল যতো বাড়ছে দূর্ঘটনার সংখ্যা ও ঝুঁকি ততো বাড়ছে।পাবনার ৯টি উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাট-বাজারের বিভিন্ন মুদি দোকান, ফার্নিচারের দোকান, লন্ড্রি, ইলেকট্রনিক্স এর দোকান, রিক্সা গ্যারেজ, এমনকি ফ্ল্যাক্সিলোডের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার। এসব দোকানে নেই কোন অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র। বড় কোন দূর্ঘটনা ঘটলে নেই প্রতিকারের ব্যবস্থা। জনবহুল কিংবা আবাসিক এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্যবসার কারণে দূর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে প্রতিনিয়ত।

জ্বালানি অধিদপ্তরের আইন অনুযায়ী , যেসব প্রতিষ্ঠান এলপিজি গ্যাস বিক্রি করবে, তাদের বিক্রির স্থান সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রেখে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাতে হবে। এলপিজি গ্যাস বিক্রির স্থানে কমপক্ষে পাকা ফ্লোরসহ আধাপাকা ঘর, অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার, মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার এবং জ্বালানি অধিদপ্তরের অনুমোদন থাকতে হবে। হাতেগোনা দু-চারজন ব্যবসায়ী ছাড়া অন্য কারো নেই সুরক্ষা ব্যবস্থা। এসব ব্যবসায়ী সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের কাশিনাথপুর এলাকায় প্রায় প্রতিটি দোকানে দেখা যায় বাড়তি লাভের আশায় দোকানের বাইরে ফুটপাতে রোদে ফেলে রাখা হয়েছে এসব গ্যাস সিলিন্ডার। রাস্তার কিনারে রাখা এসব সিলিন্ডারের পাশঘেঁষেই চলছে দ্রুতগামী যানবাহন।

১৯৯১ সালের গ্যাস সিলিন্ডার আইনে সিলিন্ডারের মান যাচাইয়ের জন্য প্রতি পাঁচ বছর পর সিলিন্ডার রিটেস্টিং (পূনঃপরীক্ষা) করার কথা বলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মান নিয়ন্ত্রন সংস্থার (আইএসও) স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পর গ্যাস সিলিন্ডার রিটেস্টিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা জানান, ২৫-৩০ বছরের পুরোনো সিলিন্ডর ব্যবহার হচ্ছে কোন রকম রিটেস্টিং ছাড়াই। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সিলিন্ডার বিস্ফোরনের ঘটনা ঘটলেও এতে সরকারের টনক নড়ছে না। আর জনগন সিলিন্ডার কেনার টাকা বাঁচাতে নিজের অজান্তেই ঝুঁকিতে বসবাস করছে। বলতে গেলে কয়েক লাখ লোক সুপ্ত মাইনের ওপর বসে আছে। এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরন এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিনত হয়েছে। কিন্তু দেখার কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে না। ভেক্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সিলিন্ডার রিটেস্টিং করা প্রয়োজন। একটি সিলিন্ডার অনন্তকাল ধরে ব্যবহার হতে পারে না।

সিলিন্ডার রিটেস্টিংয়ে না সরকার, না সংশ্লিষ্ট কোম্পানি কারোরই কোন তৎপরতা চোখে পড়ছে না। প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কি অনন্তকাল ধরে চলবে এসব পুরোনো সিলিন্ডার। যাদের পর্যবেক্ষন করার কথা সেই বিস্ফোরক অধিদপ্তর, বাংলাদেশ রোর্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ও বিএসটিআই হাত গুটিয়ে বসে আছে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বাঘাবাড়ী তেল ডিপো সূত্রে জানা যায়, দেশে বছরে তিন লাখ টন এলপিজি গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সরবরাহ রয়েছে মাত্র এক লাখ টনের মতো। বিপিসি ২০ হাজার টন ও বেসরকারি কোম্পানিগুলো ৮০ হাজার টন গ্যাস সরবরাহ করে আসছে। বিপিসির ২০ হাজার টন গ্যাস বিপণন করতে প্রয়োজন পড়ে ১৬ লাখ সিলিন্ডার (প্রতি সিলিন্ডারের ধারনক্ষমতা ১২ দশমিক ৫ কেজি)।

সিলিন্ডারের লাইফ টাইম রয়েছে ১০ বছর। ১০ বছর পর ব্যবহার করা হলে সেই সিলিন্ডারে দূর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। যিনি ব্যবহার করবেন তাকেই দায় গ্রহন করতে হবে।সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের বাইরে বসুন্ধারা গ্রুপের বসুন্ধারা গ্যাস, টিকে গ্যাস, টোটাল গ্যাস, ক্লিনহিট গ্যাস, যমুনা ও বিন হাবিব পরিশোধিত এলপিজি গ্যাস আমদানি করে বিপণন করছে। আর রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠান বিপিসি ইস্টার্ন রিফাইনারি ও কৈলাশটিলায় অবস্থিত শোধনাগারে আমদানিকৃত ক্রুড অয়েল পরিশোধনের মাধ্যমে এলপিজি গ্যাস উৎপাদন করছে। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮০ সাল থেকে এলপিজি গ্যাস বাজারজাত শুরু করে।

বেসরকারি কোম্পানির মধ্যে শুধূ বসুন্ধরা গ্রুপ মাসে ৩০ হাজার সিলিন্ডার, যমুনা গ্রুপ ১৫ হাজার সিলিন্ডার এবং টিকে ১০ হাজার সিলিন্ডার তৈরি করছে। অন্যরা বিদেশ থেকে সিলিন্ডার আমদানি করছে। দেশে নতুন পুরাতন মিলে প্রায় ২০ লাখ সিলিন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে বসুন্ধরার প্রায় ১০ লাখ সিলিন্ডার, ক্লিনহিটের দুই লাখ, টোটাল গ্যাসের এক লাখ সিলিন্ডার এবং বাকিগুলো অন্য কোম্পানির।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. কামরুল ইসলাম জানান, এলপিজি গ্যাস বাতাসের চেয়ে ওজনে ভারী। লিকেজের মাধ্যমে এলপিজি গ্যাস ছড়িয়ে পড়লে ঘরের সবচেয়ে নিচু স্থানে এসে জমা হয়। আর সেখানে কোনভাবে আগুনের স্পর্শে এলে অথবা বৈদ্যুতিক সুইচের স্পার্ক হলে অগ্নিকান্ড সংঘটিত হতে পারে। যার কারন হয়তো অজ্ঞাতই থেকে যাবে, অথবা থেকে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, সিলিন্ডার পুরোনো হয়ে গেলে বাল্ব সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। দূর্বল বাল্বের লিকেজ দিয়ে গ্যাস বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষেত্রবিশেষে নিন্মমানের বাল্বের কারণেও গ্যাস লিকেজ হচ্ছে। এতে অগ্নিকান্ড ছাড়াও ছড়িয়ে পড়া গ্যাসে শিশু ও মহিলারা আক্রান্ত হচ্ছেন। কারন এলপিজি গ্যাসের ক্ষতিকারক কার্বন শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে ঘাতকব্যাধি সৃষ্টি করছে।

বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিফ আনাম সিদ্দিকী বলেন, যত্রতত্র এলপিজি গ্যাসের ব্যবসার কারণে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় ডিলাররা বাড়তি লাভের আশায় খোলাবাজারের বিভিন্ন দোকানে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ করছেন। আমরা খুব শিগগিরই এলপিজি গ্যাসের সব ডিলারদের নিয়ে আলোচনার ব্যবস্থা করবো, যেন তারা খোলাবাজারের দোকানপাটে এসব বিক্রি জন্য না দেয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here