বাঘাবাড়ী-তাড়াশ-নিমাইচড়া বণ্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙে গেছে চলনবিল অঞ্চলের ১৪ উপজেলা প্লাবিত গোখাদ্যের অভাব গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে খামারিরা

0
340

শফিউল আযম, বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী থেকে তাড়াশের নিমাইচড়া পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের রাউতারা স্লুইস গেট সংলগ্ন এলাকায় প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে এক হাজার ২৫০ মিটার বালুর তৈরি রিং বাঁধ বন্যার পানির প্রবল চাপে ভেঙ্গে গেছে। এতে পাবনা-সিরাজগঞ্চ-নাটোর নিয়ে গঠিত চলনবিলাঞ্চলের শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ, তাড়াশ, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, চাটমোহর, সিংড়া, গুরুদাসপুর, আত্রাই, রাণীনগর, শেরপুর ও নন্দীগ্রাম উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।
এ অঞ্চলের হাজার হাজার গো-খামারে (বাথান) লালন পালন করা প্রায় তিন লক্ষাধিক গবাদীপশু নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে খামারিরা। এতে তাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বণ্যা কবলিত এলাকায় রোপিত উন্নতজাতের গো-খাদ্য ( কাঁচা ঘাস) আকষ্মিক বাঁধ ভাঙ্গা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে গো-খাদ্য কাঁচা ঘাসের তীব্র সংকট সৃস্টি হয়েছে। গত মঙ্গলবার আকষ্মিক বন্যার পানিতে বড়াল নদী তীরবর্তী রাউতারা-নিমাইচড়া চলনবিল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের রাউতারা অংশে ভেঙ্গে যায়। এতে মুহুর্তেই এ অঞ্চলের বিস্তৃত গো-চারণ ভূমি বানের পানিতে তলিয়ে যায়। এসব স্থানে প্রতিপালন করা গবাদীপশু শ্যালো নৌকার মাধ্যমে পরিবহন করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছে খামারিরা। কাঁচা ঘাস বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চলনবিল অঞ্চলে গো-খাদ্য ব্যবসায়ীরা গো-খাদ্য খড় নৌকাযোগে বিভিন্ন স্থানের খামারীদের সরবরাহ করছে।
স্থানীয় গো-খামারিরা জানিয়েছেন, ‘হঠাৎ করেই রাউতারা স্লুইচগেট সংলগ্ন এলাকায় রাউতারা-নিমাইচড়া রিং বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ায় বাঘাবাড়ী মিল্কশেড এরিয়াসহ চলনবিলাঞ্চলের প্রায় ৩ লক্ষাধিক গবাদীপশু নিয়ে গো-খামারীরা চরম উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় কালাতিপাত করছে। ইতিমধ্যেই এ অঞ্চলের গো-খামারিরা তাদের গবাদীপশুকে নিরাপদ সরিয়ে নিচ্ছে।
খামারিদের অভিযোগে জানা গেছে, নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে ড্রেজারের বালু দিয়ে তৈরী সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের রাউতারা নিমাই চড়া স্লুইচ গেট সংলগ্ন ১ হাজার ২৫০ মিটার রিং বাঁধটি অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বন্যার পানির চাপে ভেঙ্গে গেছে। এদিকে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় নতুন করে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ ও বগুড়ার উপজেলা শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, তাড়াশ, রায়গঞ্জ, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, চাটমোহর, সিংড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, শেরপুর, নন্দিগ্রাম, রাণীনগর ও আত্রাই এসব এলাকার নি¤œাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। পানি ঢুকে পড়ায় সবজি ক্ষেত ও বিস্তৃর্ণ গো-চারণ ভূমি আগাম বন্যার ডুবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
গত ২০ বছর ধরে প্রতি বছরই ফসল রক্ষার নামে এই বালুর বাঁধ নির্মাণ করা হয়। প্রথম দিকে এর ব্যয় ৯৯ লক্ষ টাকা হলেও গত কয়েক বছর ধরে এ ব্যয় বেড়ে প্রায় দেড় কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বাঁধ নির্মাণ নিয়ে প্রতি বছর সরকারের কোটি কোটি টাকার হরিলুট হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই লুটেরা চক্রের সাথে খোদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও অসাধু ঠিকাদাররা জড়িত রয়েছে বলে স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়। আজ বুধবার পোতাজিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জানান, রিং বাঁধ নির্মাণ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। তিনি এখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রধান মন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানায়। তিনি আরও জানান, গত ২০ বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অন্তত ২৫ কোটি টাকা এই বাঁধ নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিল্টন হোসেন বুধবার বিকেলে টেলিফোনে জানান, চলতি বছর মার্চ থেকে এ রিং বাঁধের কাজ শুরু হয়। এই বাঁধ নির্মাণে কোন অনিয়ম-দূর্নীতি হয়নি। সিডিউল অনুযায়ী কাজ হয়েছে। শাহজাদপুর সহ চলনবিল অঞ্চলের ফসল রক্ষার্থে গত ২০ বছর ধরে অস্থায়ী ভাবে এ বাঁধটি নির্মাণ করা হয়ে থাকে। এ বছরও করা হয়েছে। এ বাধেঁর মেয়াদ কাল ধরা হয়েছিল ৩১ মে পর্যন্ত। এ অঞ্চলের জমি থেকে সব ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। ফলে বাঁধটি ভেঙ্গে গেলেও কৃষকের কোন ক্ষতি হয়নি। তবে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প প্রনয়ন জমা দেওয়া হয়েছে। এদিকে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় নৌকা করে বালির বস্তা নিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাসী।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুস সালাম বলেন, এ বছর বাঁধটির নির্মাণ কাজ অনেক দূর্বল হলেও আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়ায় তেমন কোন বড় ধরণের ফসলহানী হয়নি। বেশ কিছুদিন আগেই এ এলাকার সব ধান কাটা হয়ে গেছে। মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন রাউতারা স্লুইচগেট সংলগ্ন রিং বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়,আশপাশের লোকজন ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধের বাঁশ খুটি যে যার মত তুলে নিয়ে যাচ্ছে। বাধের ৩টি পয়েন্ট দিয়ে হু হু করে বন্যার পানি বাঁধ অভ্যান্তেও প্রবেশ করছে। আগাম এ বন্যার পানিতে অধিকাংশ নিচু জমি, কাচা রাস্তাঘাট ও নিচু বাড়িঘর ডুবে গেছে। শত শত লোক সেখানে দাড়িয়ে ভাঙ্গনের তান্ডব দেখছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here