বেড়ায় আ’লীগ নেতার নতুন ড্রেজারে মিলাদ দিয়ে বালু উত্তোলন শুরু

0
305

শফিউল আযম, বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা ঃ
পাবনার বেড়া উপজেলার খানপুরা গ্রামে যমুনা নদী পাড়ে ড্রেজার মেশিনে মিলাদ দিয়ে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেছেন ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বকুল। সে রুপপুর ইউনিয়ন আ’লীগের যগ্ন সাধারন সম্পাদক ও আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী।
এ সংক্রান্ত একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এর সূত্র ধরে সোমবার সকালে (৪ জানুয়ারি) সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে জানা যায়, গত ২ জানুয়ারি শনিবার রেজাউল করিম বকুল স্থানীয় আ’লীগ নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে যমুনা নদী পাড়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা দিয়ে কেনা ড্রেজার মেশিনে মিলাদের আয়োজন করেন। পরে ওই দিন থেকেই সে যমুনা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রেজাউল করিম বকুল দলীয় পদ-পদবী ব্যবহার করে প্রায় ৫-৬ বছর ধরে যমুনা ও পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছে। কাশিনাথপুরে তার ৫ তলা বিল্ডিংসহ নামে-বেনামে অনেক সম্পদ রয়েছে। সে উপজেলার ঢালারচর ইউনিয়ন আ’লীগের বহিস্কৃত সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান ( সাময়িক বরখাস্ত) কোরবান আলীর জামাতা।
সূত্র জানায়, গত বছরের ৩ অক্টোবর নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে নগরবাড়ীঘাট নৌ পুলিশ রেজাউল করিম বকুলসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আমিনপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। এরপরও থেমে নেই তার অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও ব্যবসা। নদী পাড়ের কেউই তার এই অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করা সাহস পায়না। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে নানা ভাবে ভয়ভীতি, মামলার হুমকী ধমকী ও নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে। এ ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভাঙনের হুমকীর মুখে পড়েছে। ফলে ফসলী জমি, বসতভিটা, গাছপালাসহ নানা স্থাপনা ভাঙনের আশঙ্কা করছেন নদী পাড়ের মানুষ।
এ বিষয়ে রুপপুর ইউপি চেলারম্যান আবুল হাসেম উজ্জ্বল বলেন, রেজাউল করিম বকুল বিভিন্ন জায়গায় নিজেকে রুপপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। অথচ আমার ইউনিয়নে এখনো কোন কমিটি গঠণ করা হয়নি। সে আওয়ালী লীগের নাম ব্যবহার অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বালুর ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এতে দল ও সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট হচ্ছে। এদিকে আমার ইউনিয়নের নদী পাড়ের মানুষের জমিজমা বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তিনি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
রুপপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দানকারী খানপুরা গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল করিম বকুলের সাথে কয়েকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে তার স্ত্রী পরিচয় দিয়ে জৈনকা মহিলা বলেন, বকুলের জ্বর হয়েছে। এখন সে ঘুমিয়ে আছে কথা বলা যাবেনা।
বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ এ প্রতিনিধিকে বলেন, যমুনা নদী ভাঙন প্রতিরক্ষ বাঁধের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদীর যে কোনো পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন প্রতিরক্ষা বাঁধের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। নদীর যে স্থান থেকে বালু উত্তোলন করা হয় তার চার পাশের এলাকা ধসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে জন্য প্রশাসনকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই সম্ভাব্য ক্ষয়-ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আনাম সিদ্দিকী বলেন, মিলাদ দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করা নজির বিহীন ঘটনা। এ সংক্রান্ত আরো কিছু অভিযোগ আমি পেয়েছি। এ সপ্তাহের মধ্যেই অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here