ভাঙ্গুড়ায় আবাসিক এলাকা থেকে মদের দোকান উচ্ছেদ চেয়ে আবেদন

0
520

ভাঙ্গুড়া(পাবনা) প্রতিনিধি
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় আবাসিক এলাকা থেকে দেশীয় মদের দোকান উচ্ছেদ চেয়ে গ্রামবাসি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করলেও তার কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ উঠেছে। চলতি মাসের ১৭ তারিখে অষ্টমনিষা ইউনিয়নের ঘোষ পাড়া মহল্লার প্রায় দেড় শতাধিক জনতা স্বাক্ষরিত একটি লিখিত আবেদন ইউএনও মো. মাছুদুর রহমানের কার্যালয়ে জমা দেন।

আবেদনে উল্লেখ করা হয় ,অষ্টমনিষা ইউনিয়নের ঘোষ পাড়ায় রতন কুমার শীল এর বাড়িতে একটি মদের দোকান বসানো হয়েছে এবং ঐ দোকানে পাশ দিয়ে বালিকা বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও জনসাধারণ প্রতিনিয়ন যাতায়াত করে। ঐ পাড়ায় হিন্দু মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের লোকই সপরিবারে বসবাস করে আসছে। এই মদের দোকান স্থাপনের পর থেকেই এই এলাকার জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বাহিরে এলাকার বহু মাদক সেবী অবাধে দিনরাত চলাচল ও সহ অবস্থানের ফলে স্থানীয় জনসাধারনের জীবনধারণ দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে।

এবিষয়ে গত রোববার সরেজমিন অষ্টমনিষার ঘোষপাড়ায় গিয়ে দোখা যায় অষ্টমনিষা টু চাটমোহর রাস্তা সংলগ্ন কালাশীলের একতলা একটি ভাড়া বাড়িতে চালাছে রতন শীল তার মদের দোকান। মেইন কক্ষের সাথে লাগানে একটি ছোট কক্ষের দরজায় পর্দা লাগানো। ভিতরে ঢুকেই চোখে পড়ল মদ বিক্রির সাইনবোর্ড। সেখানে লেখা আছে অষ্টমনিষা দেশী মদের দোকান। মদ নেওয়ার আগে বিল দিন, ভদ্রতা বজায় রাখুন ইত্যাদি। অনেক ডাকাডাকি করে খোঁজ পাওয়া গেলে মদের বিক্রেতাকে। জানা গেল ,তার নাম রতন কুমার শীল। তিনি জানান , তিনি দেশীয় মদ বিক্রির কথা স্বীকার করে বলেন,পাবনার জেলার নগরবাড়ি এলাকার রাজকুমার শীলের নামে প্রকৃত লাইসেন্সটি। সে (রতন কুমার ) এখানে সেলসম্যান মাত্র। আগে দোকান ছিল অষ্টমনিষা বাজারের মন্দিরের পাশে, জনতার বাধার মুখে, এবছরের মার্চ মাসের ১৫ তারিখে দোকানটি সরিয়ে এখানে আনা হয়েছে। প্রতিদিন ৫০/৬০ লিটার মদ বিক্রির কথা স্বীকার করে তিনি আরও বলেন , চালানের মাধ্যমে অন্য স্থান থেকে আনা মদ এই এলাকার ১৩০ জন কার্ডধারীদের নিকট নিয়মিত ভাবে বিক্রি করে আসছেন। এসময় তার নিকট লাইসেন্স দেখতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের তা দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এবিষয়ে আষ্টমনিষা ঘোষপাড়া গ্রামের বীরমুক্তি যোদ্ধা পরিতোষ রায় চৌধুরী বলেন, এই মেদের দোকান আবাসিক এলাকা ও মেইন রাস্তার পাশে থাকায় মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা মদ খেয়ে রাস্তার উপর মাতলামী করতে থাকে। ফলে বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদেরও মাঝে মাঝে তাদের বিরক্তের স্বীকার হতে হয়। এব্যাপারে অষ্টমনিষা ইউনিয়ান আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ছোট বড় অনেক মানুষ এখানে এসে মদ পান করে মাতালামী করতে থাকে। যার ফলে এই এলাকায় জনসাধারণের বসবাসের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অবিলম্বে এই মদের দোকান এখান থেকে উচ্ছেদের দাবীও জানান তিনি। মদের দোকানের প্রতিবেশী নরেশ চন্দ্র ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, কষ্টের কথা কি আর বলবো, বাড়ির সামনে মাদকসেবীদের মাতলামীর বিষয়ে দেখেও মুখ বন্ধ করে তা সহ্য করতে হয় এর প্রতিকার পাবো কিভাবে? স্থানীয় বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ১৬/১৭ বছরের ছেলেরা এখানে বেশী আনাগোনা করেন।
এবিষয়ে অষ্টমনিষা হাসিনা মোমিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, রাস্তার পাশে খেলা থাকে মদের দোকান আর আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যাদের বাড়ি লামকান, শাহানুর, নূরনগর তাদের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা এটি। এতে ওই এলাকার শিক্ষাথীদের মাঝে মাঝেই বিপত্তির মুখে পড়তে হয়। গত শনিবার তো মদ খেয়ে দুই জন মাতলামী করতে করতে আমার বিদ্যালনয়ের ভিতর প্রবেশ করেছিল। মদের দোকানটি সরানো দরকার।
এদিকে ওসি মো. মাসুদ রানা বলেন, প্রকাশ্যে দিবালোকে মদ খেয়ে মাতলামি করার সময় ফুল আলম (৩৫) ও রুবেল হোসেন (২০) নামে দুই যুবককে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় জনতা। শনিবার দুপুরে উপজেলার অষ্টমণিষা ইউনিয়নের অষ্টমণিষা বাজার থেকে ওই দুই যুবককে আটক করা হয়। আটক ফুল পার্শ্ববর্তী চাটমোহর উপজেলার হাসিপুর গ্রামের শামছুল আলমের ও রুবেল একই গ্রামের আব্দুস সামাদের পুত্র।

অষ্টমনিষা ঘোষপাড়া এলাকাবাসীর মদের দোকান উচ্ছেদের অভিযোগের প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে ইউএনও মো. মাছুদুর রহমান বলেন, লাইসেন্সকৃত মদের দোকানের ব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষ প্রয়োজীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here