বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, পৃথিবীতে শুধুমাত্র সে দেশই নিজের পায়ের উপর দাঁড়াতে পারে, যে দেশের ছেলে আর মেয়েরা সমানভাবে পড়ালেখা করে। আমাদের বাংলাদেশেও তা শুরু হয়েছে। যে দেশের ছেলেমেয়েরা সমানভাবে লেখাপড়া করে সে দেশকে কেউ আটকিয়ে রাখতে পারবে না। কাজেই তোমাদের ভালো করে লেখাপড়া করতে হবে।
সমকালীন বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের ৭১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার লেখকের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত স্কুল ‘শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ’-এ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আগামী ১৩ নভেম্বর বুধবার হুমায়ূন আহমেদের ৭১তম জন্মবার্ষিকী।
প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদের সহোদর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের আরো বলেন, মস্তিষ্ক থেকে শক্তিশালী বিষয় পৃথিবীতে আর কিছু নেই। সেই মস্তিষ্ক কতটুকু কাজ করতে পারে তার কোনো সীমা নাই। তোমরা যত বেশি সেটা ব্যবহার করবে, ততো বেশি সেটা শক্তিশালী হবে। কাজেই তোমাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নাই। মাথাকে ব্যবহার করো। যেটা আজকে বুঝতে পারছো না, সেটা কালকে বুঝতে পারবে। তাছাড়া তিনি শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি অন্য বইও বেশি করে পড়ার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক স্থানীয় সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল বলেন, কেন্দুয়াকে উন্নত, সমৃদ্ধ এবং এলাকার মানুষকে শিক্ষিত করে তোলাসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটি স্থল হিসেবে তৈরি করতে চাই। সেক্ষেত্রে আধুনিক, সুন্দর ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কেন্দুয়া গড়ার কাজে জাফর ইকবাল এবং হুমায়ূন আহমেদের পরিবার এলাকার মানুষের ডাকে সাড়া দেবেন- সেটাই আমার প্রত্যাশা।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি স্থপতি মেহের আফরোজ শাওনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন হুমায়ূন আহমেদের বোন সুফিয়া হায়দার, সিটিজেন গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী, কেন্দুয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল কাদির ভূঁইয়া, কেন্দুয়া পৌরসভার মেয়র আসাদুল হক ভূঁইয়া ও প্রকাশক মাজহারুল ইসলামের সহধর্মিনী তানজিনা রহমান প্রমূখ।
এর আগে শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে পবিত্র কোরআন খতম ও দোয়া-মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিলের নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মী ও হুমায়ূন ভক্ত পরিষদসহ নানা শ্রেণিপেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন।
তাছাড়া জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, হুমায়ূন আহমেদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা এবং অতিথিদের ক্রেস্ট ও উপহার প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। সবশেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এসআই টুটুল ও সেলিম চৌধুরীসহ স্থানীয় শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন।
শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের সহকারী শিক্ষক শরিফ আনিস আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বিপুল সংখ্যকের মানুষের সমাগম ঘটে।