পাবনা-সিরাজগঞ্জের খামারি ও ব্যাপারিরা অবিক্রিত ৭৫ হাজার গরু নিয়ে চরম বিপাকে

0
327

শফিউল আযম ঃ
পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের গো-খামারী, চাষি, মওসুমি ব্যবসায়ী ও ব্যপারিদের মহামারি করোনাভাইরাস ও বণ্যার
কারণে কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি কম হওয়ায় ব্যাপক লোকসান হয়েছে। এছাড়া ক্রস হাইব্রিড ও দেশি মাঝারি
জাতের প্রায় ৭৫ হাজার অবিক্রিত গরু নিয়ে তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। অনেক ব্যাপারি খামারি ও চাষিদের পাওনা
টাকা পরিশোধ না করতে পেরে পালিয়ে ফিরছে বলে জানা গেছে।
এ অঞ্চলের বেড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর, আটঘড়িয়া, ঈশ্বরদী, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া,
তাড়াশ. চৌহালী, কামারখন্দ উপজেলার খামারি, চাষিরা ও মওসুমি ব্যবসায়ীরা ক্রস জাতের পাবনা ব্রিড, অষ্ট্রেলিয়ান-
ফ্রিজিয়ান ব্রিড, ইন্ডিয়ান হরিয়ান ব্রিড, পাকিস্তানি সাহিয়াল ব্রিড ও দেশি জাতের গরু পালন করেন। সারা
দেশে এ অঞ্চরের গরুর খ্যাতি ও চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এবার দেশে মহামারি করোনাভাইরাস ও বণ্যার কারণে কোরবানীর
পশুরহাটগুলোতে ক্রস হাই ব্রিড ও দেশি মাঝারি জাতের গরু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি থাকায় গরুর দরপতনে এ
অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার গরুর ব্যাপারি ও খামারি মূলধন হারিয়ে পথে বসেছেন। তবে মওসুমি গরু ব্যবসায়ীরা এবার
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
গবাদিপশু সমৃদ্ধ পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের খামারি ও চাষিরা জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় আড়াই লাখ কোরবানির পশু
দেশের বিভিন্ন হাটে সরবরাহ করেছিলেন। গরু ব্যবসায়ীরা খামারি ও চাষিদের কাছ থেকে নগদ-বাঁকীতে গরু কিনে
বিক্রির জন্য সড়ক ও নৌপথে ঢাকা, সিলেট, চিটাগাংসহ বিভিন্ন জেলার পশুরহাটে নিয়ে যায়। চাহিদার তুলনায়
গরুর সরবরাহ বেশি থাকায় ঈদের দুই দিন আগে দেশের বিভিন্ন পশুরহাটে গরুর দাম কমে যায়। এতে অনেক ব্যবসায়ী
ও খামারি বাধ্য হয়ে লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করেছেন। এদিকে ঈদের তিনদিন আগে ঢাকার পশুরহাটগুলোতে গরুর
সঙ্কট দেখা দেয়। এ খবরে ব্যাপারিরা রাতারাতি অনেক গুরু কিনে ট্রাকে কওে সড়ক পথে ঢাকা গরু পাঠায়। জ্যামে
ট্রাক আটকে পড়ায় ঈদের দিন সকালে ট্রাক ঢাকা পৌঁছায়। কিছু কিছু গরু বিক্রি হলেও অনেকেই বিক্রি করতে
না পেরে গরু ফেরত নিয়ে এসেছেন।
সিরাজগঞ্জ উপজেলার রাউতরা গ্রামের আহম্মদ উল্লাহ বললেন, গতবছর ঈদের আগে বিভিন্ন জেলার ব্যাপারিরা খামারি ও
চাষিদের বাড়ি থেকে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া কিনে তারা ট্রাক ভতি করে নিয়ে যেত। এবার করোনা ভাইরাস ও বন্যার
কারণে দুর-দুরান্ত থেকে ব্যাপারিরা গরু কিনতে আসেন নাই। মানুষের আর্থিক অবস্থা ভাল না। গরু বিক্রি করতে না
পারায় সংসার চালানো নিয়ে তিনি কঠিন সমস্যায় পড়েছেন বলে জানিয়েছেন। একাধিক গরু ব্যবসায়ী ও
খামারির বলেছেন, একদিকে মহামারি করোনা ভাইরাস ও বন্যা অন্যদিকে হাটে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি হওয়ায়
ঈদের দেড় মাস আগে থেকেই গরুর দাম ব্যাপকভাবে কমে যায়। ট্রাক ও নৌকার ভাড়াসহ পথ খরচ উঠানোর জন্য
ব্যবসায়ী ও খামারিরা লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করেছেন।
বেড়ার নতুনপাড়া গ্রামের হায়দার আলী ঢাকার গাবতলী পশুরহাটে ৭০টি গরু তুলেছিলেন। এরমধ্যে ৩৫টি গরু ১৫
লাখ টাকা লোকসান দিয়ে বিক্রি করেছেন। অবিক্রিত অবশিষ্ট ৩৫টি গরু ফেরত নিয়ে এসেছেন। একই গ্রামের
মন্টু ব্যাপারির ৪৩টি গরুর ২১টি বিক্রি হয়েছে, ২২টি ফেরত নিয়ে এসেছেন। তার লোকসান হয়েছে প্রায় ৭ লাখ
টাকা। নদী পাড়ের সোলেমান ব্যাপারির ১০৫টি গরুর মধ্যে ৫৫টি বিক্রি হয়েছে। অবিক্রিত ৫০টি গরু ফেরত নিয়ে
এসেছেন। তার লোকসান হয়েছে প্রায় ১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকা।
বেড়ার রাকশা গ্রামের কালা ব্যবসায়ী ৮টি গরু বিক্রি করে এক লাখ টাকা, হাতিগাড়া গ্রামের আকরাম ও আলতাফ
ব্যবসায়ী লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করেছেন। সাঁথিয়া উপজেলার সেলন্দা গ্রামের খামারি রজব আলী হাইব্রিড
জাতের ২০টি গরু চট্রগ্রাম হালিশহর হাটে নিয়েছিলেন। তার ৮টি গরু বিক্রি হয়েছে। অবিক্রিত ১২টি অনেক
কষ্ট করে ফেরত নিয়ে এসেছেন। তার লোকসান হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকা। পাবনা জেলার দুই সহ¯্রাধিক গরু
ব্যবসায়ী ও খামারি প্রত্যেকের ৫০ হাজার থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত লোকসান হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
এদিকে অনেক খামারি বাঁকী টাকা না পাওয়ার আশঙ্কায় ব্যাপারিদের কাছ থেকে গরু ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন। আবার
অনেক ব্যাপারি খামারী ও চাষিদের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে তাদের পরিবারের সদস্যরা
জানিয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here